Paper Straw Making Business Idea in Bengali – কাগজের তৈরি পাইপের ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে? কাগজের তৈরি পাইপের ব্যবসার কত চাহিদা? কত টাকা ইনকাম হবে? জানুন সবকিছু কাগজের তৈরি পাইপের ব্যবসা সম্পর্কে।
বর্তমানে সরকার থেকে সহযোগিতা করা হয় কোন ব্যবসা করার জন্য। আপনি যদি কোন ছোট ব্যবসা করার চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে নিজের পুঁজি কাজে লাগানোর পাশাপাশি সরকারের কাছ থেকেও আর্থিক সহযোগিতা ও উৎসাহ পেতে পারেন।
আজ এমনই এক ব্যবসা হল পেপার স্ট্র অর্থাৎ কাগজের তৈরি পাইপ এর ব্যবসা। কোন জুস, লস্যি খাওয়ার জন্য এই পাইপের ব্যবহার করা হয়, এমনকি ডাবের জল বা তরল কোন খাবার খাওয়ার জন্য পাইপের প্রয়োজন হয়।
আর এই পাইপ একবার মাত্র ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। এক কথায় প্লাস্টিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে প্লাস্টিকের পাইপের চাহিদাও প্রচুর পরিমাণে কমে গিয়েছে তার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কাগজের এই পাইপ সবার খুবই পছন্দের হয়ে উঠেছে। তাই তো এই ব্যবসাটি করে খুবই কম সময়ের মধ্যে লাভবান হওয়া যায়।
প্রতিনিয়ত পেপার অথবা কাগজ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে চলেছে। কেননা এটি ব্যবহার করার পরে কোথাও ফেলে দিলে তা মাটির সাথে সহজেই মিশে যায় এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখে। পরিবেশ বাঁচানোর পাশাপাশি আমাদের সৌখিনতাও বজায় থাকলো।
যদি আপনি কোন ব্যবসার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে এই কাগজ তৈরির ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। পেপারের পাইপ তৈরির জন্য কাঁচামাল এর প্রয়োজন পড়ে আর এর জন্য ইউনিট বসানোর অথবা মেশিনের প্রয়োজন পড়বে, আর প্রতি মাসে প্রচুর টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
কাগজের তৈরি পাইপের ব্যবসা (Paper Straw Making Business) :
বাজারে কাগজ দিয়ে তৈরি করা কাপ, গ্লাস, থালা, বাটি, প্লেট, পাইপ যা একবার মাত্র ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয় তার চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। কেননা প্লাস্টিকের পরিবর্তে এগুলি সকলে ভীষণভাবে পছন্দ করছেন।
সকলের পছন্দের কথা মাথায় রেখে ও পরিবেশ কে রক্ষা করার জন্য এই ব্যবসাটি আপনার পছন্দ হতে পারে, আর প্রতিমাসে কয়েক লক্ষ টাকা উপার্জন করতে পারেন। কাগজের পাইপ ম্যানুফ্যাকচারিং এর এই ব্যবসাটি প্রচুর পরিমাণে বাজারে নজর কেড়েছে।
এখানে বলে রাখা জরুরী যে, ভারত সরকার “সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক (Single Use Plastic)” এর উপরে ১ জুলাই ২০২২ এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যার ফলে বাজার থেকে প্লাস্টিকের অনেক পণ্য উধাও হয়ে গিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিকের পাইপ।
তরল জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার জন্য এই পাইপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে প্রচুর, তাই বাজারে চাহিদা পূরণ করতে সরকার প্লাস্টিক পাইপের পরিবর্তে কাগজের প্লাস্টিকের ব্যবসার উপরে বেশি জোর দিয়েছে। তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কাগজের তৈরি পাইপের ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে:
কাগজের তৈরি পাইপের ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে:
খাদি এবং গ্রাম উদ্যোগ আয়োগ (KVIC) পেপার স্ট্র অথবা কাগজের পাইপ এর ইউনিট এর উপরে একটি প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করেছে।
যেখানে জানা যায় যে কাগজে তৈরি এই পাইপ বানানোর জন্য অথবা ব্যবসাটি শুরু করার আগে সরকার থেকে এপ্রুভাল এবং রেজিস্ট্রেশন অবশ্যই করাতে হবে। এই প্রজেক্ট এর জন্য জিএসটি (GST) রেজিস্ট্রেশন, উদ্যোগ আধার রেজিস্ট্রেশন (বৈকল্পিক) প্রোডাক্টের ব্র্যান্ডের নাম এর প্রয়োজন পড়বে।
শুধু তাই নয় রাজ্য প্রদর্শন নিয়ন্ত্রণ বোর্ড থেকে এন ও সি (NOC) এর মত প্রাথমিক কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়বে। স্থানীয় নগরপালিকা প্রাধিকরণ থেকে এই ব্যবসার লাইসেন্সও নেওয়া জরুরি। এর ফলে আপনি ব্যবসাটি খুবই সুন্দরভাবে করতে পারবেন।
কাগজের পাইপের চাহিদা
যখন আপনি কোন হোটেল অথবা রেস্টুরেন্টে যাবেন সেখানে গোল্ড কফি থেকে শুরু করে যে কোন ড্রিংকস অথবা জুস, ডাবের জল, যে কোন তরল জাতীয় খাবার যদি খেতে চান তাহলে সেখানে আপনাকে অবশ্যই খাওয়ার জন্য পাইপ এর ব্যবহার করতে হয়।
আর শুধুমাত্র কোন হোটেল অথবা রেস্টুরেন্টই নয়, রাস্তার ধারে থেকে শুরু করে ছোটখাটো বিভিন্ন দোকানে তরল কোনো খাবার খাওয়ার জন্য পাইপের প্রয়োজন রয়েছে। ছোট জুসের ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় ডেয়ারি কোম্পানি পর্যন্ত এই পাইপের চাহিদা রয়েছে বহুগুনে।
সেই কারণে প্রতিনিয়ত এই পাইপের চাহিদা বাড়ার জন্য আপনি যদি কাগজের পাইপ তৈরি করে বিক্রি করেন তাহলে প্রচুর লাভ অর্জন করতে পারবেন। আর প্রতিনিয়ত এর চাহিদা আরো বাড়বে আর আপনার ব্যবসাটিও বড় হতে থাকবে।
কাগজের তৈরি পাইপের ব্যবসায় বিনিয়োগ
প্রতিটি ব্যবসার মতো এই ব্যবসাতেও বেশ কিছু টাকা পুঁজি নিয়ে তবেই কিন্তু শুরু করতে হবে। কেননা যখন উৎপাদন এর মত কোন ব্যবসার করবেন তখন একটু খরচ সাপেক্ষ হয়ে পড়ে, কেননা ইউনিট ও মেশিনপত্র বসানোর জন্য বেশ কিছু টাকা বিনিয়োগ করতে হয়।
KVIC অনুসারে কাগজের পাইপ তৈরীর এই ব্যবসাটি শুরু করতে মোট ১৯.৪৪ লাখ টাকার প্রয়োজন পড়বে। এর থেকে আপনি শুধুমাত্র নিজের থেকে ১.৯৪ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন। বাকি ১৩.৫ লক্ষ টাকা টার্ম লোন নিতে পারেন। ব্যাংকিং ক্যাপিটাল এর জন্য ৪ লাখ টাকা ফাইন্যান্স করতে পারেন।
এই ব্যবসাটি ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে শুরু হয়ে উপার্জন এনে দেবে প্রতি মাসে মোটা টাকা। এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য আপনি প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা লোন স্কিম (PM Mudra Loan Scheme) থেকেও লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
কাগজের পাইপ তৈরির জন্য কাঁচামাল:
কাগজের পাইপ তৈরি করার জন্য যে কাঁচামালের প্রয়োজন পড়বে তার মধ্যে তিনটি জিনিস খুবই প্রয়োজনীয় তার মধ্যে রয়েছে ফুট গ্রেট পেপার (Food Grade Paper), ফুড গ্রেড গাম পাউডার (Food Grade Gum Powder) এবং প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়ালস এর প্রয়োজন পড়বে।
অর্থাৎ প্যাকেটজাত করে বিক্রি করার জন্য অবশ্যই প্যাকেটের প্রয়োজন হবে। এছাড়াও একটি পেপার স্ট্র মেকিং মেশিন (Paper Straw Making Machine) অবশ্যই প্রয়োজন। যে মেশিনের দাম প্রায় ৯ লক্ষ (৯,০০,০০০) টাকা।
কাগজের পাইপ তৈরির ব্যবসা থেকে উপার্জন ও লাভ:
কাগজের পাইপ তৈরীর এই ব্যবসাটি প্রতিমাসে লক্ষ টাকা উপার্জন করে দিতে পারে। KVIC এর রিপোর্ট অনুসারে যদি আপনি ৭৫% ক্ষমতার সাথে এই কাগজের পাইপ তৈরির কাজটি শুরু করেন তাহলে আপনার মোট বিক্রি ৮৫.৬৭ লাখ টাকা হবে।
তবে সমস্ত খরচ ও ট্যাক্স বাদ দিয়ে প্রতি বছরে ৯.৬৪ লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন। প্রতি মাস ধরে যদি হিসাব করা যায় তাহলে প্রতি মাসে ৮০ হাজার টাকার থেকেও বেশি উপার্জন করতে পারবেন এই ব্যবসা থেকে।
যদি লোন নিয়ে থাকেন ব্যবসার জন্য তাহলে প্রতি মাসে অল্প অল্প করে লোন পরিশোধ করতে পারবেন। আর দেড় বছর থেকে দু বছরের মধ্যে লোন পরিশোধ করার পাশাপাশি এই ব্যবসা থেকে সমস্ত লাভ কিন্তু আপনার থাকবে।
যে জিনিসের চাহিদা বাজারে প্রচুর রয়েছে সেই জিনিসের ব্যবসাটি আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি প্রচুর টাকা উপার্জন করার সুযোগ দেবে।
তেমনি এই কাগজের পাইপ তৈরির ব্যবসাটি একটু খরচ সাপোর্ট হলেও বিনিয়োগের মাত্রাটা একটু বেশি হলেও, প্রতি মাসে প্রচুর টাকা উপার্জন করার একটা সুযোগ রয়েছে। সমস্ত টাকা যদি আপনার কাছে না থাকে তাহলে লোনের মাধ্যমে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা লোন যোজনা অনুসারে লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন, আর ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন খুব শীঘ্রই। অবশ্যই যে কাগজপত্র গুলি ব্যবসার আগে প্রয়োজন পড়বে সেগুলো আগে থেকেই আপনাকে ঠিক করে রাখতে হবে।