Palash Farming Business Idea in Bengali – পলাশ ফুলের চাষের ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে? পলাশ ফুলের ব্যবসার কত চাহিদা? কত টাকা ইনকাম হবে? জানুন সবকিছু পলাশ ফুলের চাষের ব্যবসা সম্পর্কে।
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক বড় বড় ফুল গাছ আছে যা সময়ে খুব বেশি ফুল হওয়ার কারণে প্রকৃতিকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে। তেমনি একটি ফুল হল পলাশ ফুল। পলাশ ফুল বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত হলেও এটি দেখতে অনেকটা বকের ঠোঁটের মত। বিভিন্ন জায়গায় পলাশ ফুল পরসা, টাক, টেসু, কিশক, সুপকা, ব্রম্ভবৃক্ষ এবং ফেল্ম অফ ফরেস্ট এই ধরনের নামে পরিচিত।
এই ফুলের বীজ, ফুল, পাতা, গাছের ছাল, গাছের শিকড় এবং গাছের গুড়ি সমস্ত কিছু খুবই প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হয়। বলতে গেলে সম্পূর্ণ গাছ আমাদের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে থাকে। পলাশের আয়ুর্বেদিক চূর্ণ এবং তেল ভীষণ দামে বিক্রি হয়ে থাকে। আর এই পলাশ ফুলকে কাজে লাগিয়ে করতে পারেন কোন ব্যবসা।
যদি ছোটখাটো কোন ব্যবসার কথা চিন্তা করে থাকেন নিজের বর্তমান কাজের পাশাপাশি তাহলে পলাশ ফুল গাছ রোপন করে তা থেকে বহু বছর পর্যন্ত এই ব্যবসাটি করতে পারবেন। যখন পলাশ ফুল গাছ রোপন করবেন তখন শুধুমাত্র ফুলের জন্য নয় ব্যবসা থেকে অর্জন করার জন্য তাকে যত্ন করে বড় করবেন। যদি আপনি কোন গাছ লাগিয়ে সেখান থেকে কিছু টাকা উপার্জন করতে চান, তাহলে পলাশ ফুল চাষ (Palash Flower Cultivation) করতে পারেন।
পলাশ ফুল প্রকৃতিকে সুন্দর রাখার পাশাপাশি আপনাকে সারা জীবনের মতো মুনাফা অর্জন করে দেওয়ার একটি কারখানা হয়ে উঠতে পারে। পলাশ ফুল গাছের এত গুনাগুন যে তা বলে শেষ করা যাবে না। এই ফুল সুন্দর হওয়ার জন্য সকলেই ভীষণ পছন্দ করেন। পলাশ ফুল বিভিন্ন নামে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। এই পলাশ ফুলকে উত্তরপ্রদেশের রাজকীয় ফুল হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।
রং তৈরি করার জন্য এই পলাশ ফুলের বিশেষ ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু বিগত কিছু বছরে এই ফুলের চাষ প্রচুর পরিমাণে কমে গিয়েছে। তার ফলে উৎপাদন ও আমদানি কমে গিয়েছে। আবার অন্যদিকে এই ফুল চাষ করে কৃষকরা প্রচুর পরিমাণে মুনাফা অর্জন করছেন। এই পলাশ ফুল উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট, মানিকপুর, বাঁদা, মহবা এবং মধ্যপ্রদেশের সাথে জড়িত বুন্দেলখন্ডে পাওয়া যায়।
পলাশ ফুলের বিশেষত্ব
পলাশ ফুল গাছে যখন প্রচুর পরিমাণে ফুটে থাকে তা যেমন গাছকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে তেমনি আশেপাশের পরিবেশকে আবার নতুনভাবে সাজিয়ে তোলে। দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি এই ফুলে রয়েছে প্রচুর গুনাগুন এই ফুলের চাষ ঝাড়খন্ড, দক্ষিণ ভারত, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশে করা হয়ে থাকে।
সারা পৃথিবীতে জৈবিক রঙের জন্য খুবই পরিচিত এই পলাশ ফুল। আর এর চাষ করে ঝাড়খন্ড থেকে দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত মানুষ প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন। আপনি যদি চান তাহলে প্রতি একর জমিতে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে পলাশ ফুলের চারা লাগিয়ে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
একবার রোপন করার পর তা থেকে সারা জীবন এই ব্যবসাটি করতে পারবেন, আর প্রতিনিয়ত উপার্জন করতে থাকবেন। একবার গাছ রোপন করার পর ৩০ বছর পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে উপার্জন করতে পারবেন এই গাছ থেকে। পলাশ ফুলের বীজ, ফুল, পাতা, গাছের ছাল, গাছের শিকড় ও কাঠ ছাড়াও পলাশ এর আয়ুর্বেদিক চূর্ণ এবং তেল খুবই ভালো দামে বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। পলাশ ফুল গাছের পলাশ ফুল গাছের চারা রোপন করার পর ৩-৪ বছরে গাছে ফুল আসতে শুরু করে।
সরকার দিয়েছে পলাশ ফুলকে বিশেষ জায়গা
পলাশ ফুল গাছ থেকে উৎপাদিত টেসু এর গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম। আর এটি অনেকেই হয়তো জানবেন ১৯৮১ সালে ভারত সরকার ৩৫ পয়সা ডাকটিকিট জারি করেছিল তখন উত্তরপ্রদেশ সরকার ৮ ডিসেম্বর ২০১০ সালে পলাশ ফুলকে ‘রাজ্য পুষ্প’ ঘোষণা করেছিল।
আর এইসব দিক থেকে পলাশ ফুলের জায়গা অনেকটাই উপরে। সরকারি ভাবে পলাশ ফুলের বিশেষ জায়গা রয়েছে আর এই ফুলের চাষের ক্ষেত্রেও সরকার উৎসাহিত করে থাকে।
বিদেশেও পলাশ ফুলের গুরুত্ব ও সম্মান
পলাশ ফুলের বিশেষত্ব ও সম্মান শুধুমাত্র ভারতেই নয়, ভারত ছাড়াও আরো অন্যান্য দেশে অর্থাৎ বিদেশেও গুরুত্ব রয়েছে। পলাশ ফুল গাছের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কতখানি তা অনুমান করা যেতে পারে, বিদেশে সেখানকার সরকার পলাশ এর উপর ডাক টিকিট জারি করে ২৫ আগস্ট ২০০৪ সালে বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে পলাশ ফুল গাছকে বিশেষ ফুলের সম্মান দেওয়া হয়।
বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় যে ২৪ আগস্ট ২০০৪ সালে বাংলাদেশ এবং ১৯৭৪ সালে থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে পলাশ ফুলের সম্মান স্বীকার করা হয়েছে। পলাশ ফুলের এত গুরুত্ব থাকার ফলে এই সম্মান প্রাপ্ত হয়েছে।
পলাশ ফুলের উপকারিতা:
যদি আপনি ব্যবসাটি করতে চান তাহলে অবশ্যই জানতে ইচ্ছা করবে যে পলাশ ফুল কি কি কাজে ব্যবহার করা হয় তাই না ! তবে জানা যায় যে যদি নাক, কান, মল-মূত্র অথবা অন্য কোন জায়গা থেকে রক্ত স্রাব হয়ে থাকে তাহলে পলাশ গাছের ছাল কে ৫০ মিলি একটি ওষুধ বানাতে হবে জল মিশিয়ে, আর সেটিকে ঠান্ডা করে মিছরি মিশিয়ে পান করতে হবে, এতে লাভবান হওয়া যায়।
পলাশ ফুল আমলকির সাথে অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার ক্ষেত্রেও মানব শরীরে হাড় শক্ত হয়। এর সাথে সাথে গরম জলের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার ফলে ডায়রিয়ার মত অসুখও সেরে যেতে পারে। বিভিন্ন রং তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় কেননা পলাশ ফুল খুবই সুন্দর রংয়ের হয়ে থাকে।
পলাশ ফুল চাষের জন্য বিনিয়োগ ও লাভ
পলাশ ফুল চাষ করার জন্য আপনার প্রয়োজন পড়বে কিছুটা জমি অর্থাৎ এক হেক্টর জমিতেও আপনি চাষ করতে পারবেন ছোট পরিসরে। সেক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করতে পারেন এই ব্যবসাটি।
একবার চারা রোপন করার পর ৩-৪ বছর পর থেকে ফুল আসতে শুরু করবে, আর আপনার উপার্জনও শুরু হয়ে যাবে। টানা ৩০ বছর থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত এই পলাশ ফুল গাছ থেকে লাভ অর্জন করতে পারবেন।
পলাশ ফুল গাছের সমস্ত কিছু দিয়ে যেমন ফুল, গাছের ছাল, গাছের শিকড়, পাতা সবকিছু দিয়ে কোন না কোন প্রয়োজনীয় জিনিস বানিয়ে থাকে যে সমস্ত কোম্পানি তাঁদের সাথে যোগাযোগ করেও আপনি আপনার পলাশ ফুল গাছের সমস্ত কিছু বিক্রি করতে পারেন।
প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা অপার্জন করা থেকে শুরু করে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
রাস্তার ধারে অথবা অন্য কোন জায়গায় দুই একটা পলাশ ফুল গাছে দেখা মিললেও আপনি এই পলাশ ফুল পড়ে থাকা জমিতে একের পর এক রোপণ করে চাষ করতে পারেন। সেটি দূর থেকে সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখার পাশাপাশি আপনার ব্যবসাতেও প্রচুর মুনাফা এনে দেবে। তবে যে জমিতে এই ফুল চাষ করবেন তার চারিপাশে ঘিরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। আলাদাভাবে অন্য কোন দেখভালের প্রয়োজন নেই।