PVC Pipe Making Business Idea 2024 (পিভিসি পাইপ তৈরি করার ব্যবসা 2024): How to Start PVC Pipe Making Business in Bengali? | PVC Pipe Making Business Plan in Bengali | Know PVC Pipe Making Process and Business Idea in Bengali.
পিভিসি পাইপ, নামটা তো সকলেরই চেনা, তাই না। তবে এই ব্যবসাটি শুরু করার আগে সবচেয়ে ভালো যে, খুব ভালোভাবে জানতে হবে আসলে পিভিসি পাইপ কি? আর এর ব্যবহার গুলি কি কি? তো সে ক্ষেত্রে পিভিসি পাইপ বিভিন্ন রকমের কাজে ব্যবহার করা হয়। আজকাল এই পাইপ দিয়ে সমস্ত রকমের পাইপলাইন এর কাজ এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
পিভিসি পাইপ হলো পলিভিনাইল ক্লোরাইড পাইপ যার ব্যবহার কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি, বিদ্যুৎ এবং ইরিগেশন ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা রূপে ব্যবহার করা হয়। এই পাইপ বিভিন্ন রকমের রঙের হয়ে থাকে। যদি আপনি এই পাইপের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট বসিয়ে থাকেন তাহলে এই ব্যবসা থেকে খুব ভালো মত একটা উপার্জন করতে পারবেন আপনি।
কেননা বর্তমানে এই পিভিসি পাইপের চাহিদা এত পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে যে, এর ম্যানুফ্যাকচারিং আরো বেশি চাহিদা সম্পন্ন হয়ে পড়ছে। তো এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য আপনি কীভাবে এই পাইপের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট শুরু করবেন, সেটা জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক সাহায্য করবে আশা করা যায়।
বিভিন্ন রকমের পিভিসি পাইপ:
আমরা সাধারণত পিভিসি পাইপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাদা রঙের দেখে থাকি, তবে বিভিন্ন রকমের পাইপ হয়ে থাকে। যা কিনা বিভিন্ন রকম কাজে ব্যবহার করা হয়।
এমন কিছু পিভিসি পাইপের কথা বলা হলো যেগুলি আলাদা আলাদা কাজে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে থেকে যেকোন রকমের পিভিসি পাইপ ম্যানুফ্যাকচারিং করে আপনি আপনার নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারেন। পিভিসি পাইপ গুলি হল:-
১) পলিইউরিথেন পাইপস
২) রিসাইকিল্ড পিভিসি পাইপ
৩) পিডিএফ লাইনড পাইপস
৪) ইউপিভিসি প্রেসার পাইপস
৫) ফ্লেক্সিবেল পাইপস
৬) ইউপিভিসি কলাম পাইপস
৭) পিভিসি প্লাম্বিং পাইপস
৮) ওয়াটার সাপ্লাই পাইপস
৯) বেস্ট পাইপস
১০) কম্পোজিট পাইপস
১১) এইচডিপিই ডবল বল কারোগেডেট পাইপস
১২) ইউপিভিসি কৃষি সেচ পাইপস
১৩) স্প্রিংকলার পাইপস
পিভিসি পাইপ বানানোর ব্যবসাতে রেজিস্ট্রেশন এবং লাইসেন্স:
যে ব্যবসাই করুন না কেন তার জন্য কিছু না কিছু রেজিস্ট্রেশন এবং লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। আপনি যদি পিভিসি পাইপ বানানোর ব্যবসা শুরু করেন তাহলে এই সমস্ত রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, এবং লাইসেন্স আপনাকে তৈরি করে রাখতে হবে।
১) সবার প্রথমে আপনি আপনার ব্যবসাটিকে একটি লিমিটেড লাইবিলিটি কোম্পানি রূপে রেজিস্টার করে নিন।
২) এরপর অন্য পারমিটার থেকে আই এস ও সার্টিফিকেশন, আপনার ব্যবসা ব্র্যান্ডটিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি করিয়ে রাখা প্রয়োজন।
৩) তাছাড়া নগর পালিকা অথরিটি থেকে ট্রেড লাইসেন্স বীমা এবং ট্যাক্স নাম্বার সংগ্রহ করতে হবে আপনাকে।
৪) তার সাথে সাথে যে ব্যবসাটি আপনি শুরু করতে চাইছেন তার জন্য একটি কারখানা খুলতে হবে, যেখানে এই পাইপ তৈরি করার কাজ আপনি করতে পারবেন অনায়াসে। এর জন্য আপনাকে প্রদর্শন নিয়ন্ত্রণ বোর্ড থেকে এন ও সি নিয়ে রাখতে হবে। তার সাথে সাথে বেট রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে অবশ্যই।
৫) যখন আপনি পিভিসি পাইপ তৈরি করার কাজ শুরু করবেন তার আগে এই সম্বন্ধে সমস্ত রকম তথ্য এবং জরুরী কাজকর্ম অবশ্যই জেনে নেবেন। তার সাথে সাথে এই উদ্যোগের জন্য উদ্যোগ আধার এমএসএমই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন এর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারেন।
৬) আপনার তৈরি করা পিভিসি পাইপের কোয়ালিটি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিআইএস সার্টিফিকেশন অর্থাৎ আপনার তৈরি করা প্রোডাক্টের গুণমান সার্টিফিকেশন করিয়ে রাখতে হবে। যার ফলে পিভিসি পাইপ তৈরি হয়ে যাওয়ার পর তার সম্পর্কে কোন রকম প্রশ্ন যেন না থাকে।
৭) তার সাথে সাথে বর্তমানে চালু থাকা ব্যাংকের একটা একাউন্ট থাকতে হবে, এর জন্য সরকারি ব্যাংক টাকেই বেছে নিতে পারেন।
পিভিসি পাইপ বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন এবং উপকরণ:
যদিও আপনি পিভিসি পাইপ বানানোর ব্যবসা শুরু করতে চলেছেন তার জন্য আপনার বিভিন্ন রকমের মেশিন এবং বিভিন্ন রকমের উপকরণের প্রয়োজন পড়বে, সেগুলো কি কি চলুন জানা যাক:
১) হাই স্পিড মিক্সার:
এই ব্যবসাটি শুরু করতে গেলে সবার প্রথমে আপনার প্রয়োজন পড়বে হাই স্পিড মিক্সার। জেটি নন শোল টাইপ ক্যাপ ৫০ কিলো গ্রাম প্রতি ঘন্টায় হয়ে থাকে এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত এবং কুলিং ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়ে থাকে।
২) রিজিড পাইপ এক্সট্রুডার:
এই ব্যবসার ক্ষেত্রে পিভিসি পাইপ বানানোর জন্য 65mm প্রতি 18b পিভিসি পাইপ এক্সট্রুডার প্লান্ট এর প্রয়োজন পড়বে আপনার। যার মধ্যে থাকবে দুটো স্ক্রু এক্সট্রুডার, ভ্যাকিউম সাইজিং ইউনিট, কুলিং ট্যাংক, হোল অফ দা ইউনিট অর কন্ট্রোলস, এবং মোটর ইত্যাদি এর সাথে কাটিং ডিভাইস ও থাকে।
৩) বিভিন্ন আকারের ডাই:
পিভিসি পাইপ বিভিন্ন আকারের এবং বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে, এর জন্য আপনার প্রয়োজন পড়বে বিভিন্ন আকারের ডাই। যেমন ধরুন ২০, ২৫, ৪৫, ৬৩, ৭৫, ৯০ এবং ১১০ mm এর ডাই। তার সাথে সাথে মেন্ডেল, যেমন ধরুন ২.৫, ৪৬ এবং ১০ কিলো গ্রাম প্রতি বর্গ সেন্টিমিটার ইত্যাদি। এই আকারে হতে হবে আপনার তৈরি করা পিভিসি পাইপ গুলি।
৪) স্ক্র্যাপার এবং গ্রাইন্ডার:
এই ব্যবসা করার জন্য অতি ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রিক মোটর এবং তার সাথে সাথে স্ক্র্যাপার এবং গ্রাইন্ডার এর প্রয়োজন পড়বে।
৫) অন্যান্য উপকরণ:
উপরের ঐ সমস্ত জিনিস গুলো ছাড়াও জলের ট্রাংক, রিসাইকেলিং পাম্প ইউনিট, ওজন মাপার যন্ত্র পাতি, মোডরেট এক্সুরেসি, ক্ষমতা সম্পন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল মডেল, পাইপ স্টোরেজ, রেক্স, এমন কিছু জিনিসপত্র যেগুলি হাত দিয়ে কাজ করা যেতে পারে, গ্রিসিং এবং তেল লাগানো জন্য বিভিন্ন রকমের উপকরণ ইত্যাদি আপনার প্রয়োজন পড়বে।
৬) বিভিন্ন রকমের টেস্ট উপকরণ:
তার সাথে সাথে এমন কিছু উপকরণের প্রয়োজন পড়বে যেগুলি কেমিক্যাল টেস্ট করার জন্য প্রয়োজন, যেমন ধরুন রাসায়নিক সামঞ্জস্য বজায় রাখা, ওভেন এবং টেস্টিং উপকরণ, বাল্ক ডেনসিটি বিশিষ্ট গ্রেভিটি লীড এবং টিন এস্টিমেশান ইত্যাদি।
তার সাথে সাথে ল্যাব ক্যাপাসিটি টেস্টিং উপকরণ যেমন ধরুন ইম্প্যাক্ট টেস্ট, কম্প্রেসিভ স্ট্রেঙ্থ, হাইড্রোলিক প্রেসার (লং ট্রাম্ এবং short-term) ইত্যাদি উপকরণ আপনার এই ব্যবসা শুরু করতে প্রয়োজন পড়বে।
পিভিসি পাইপ বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং কোথায় থেকে কিনবেন:
এই ব্যবসাটি শুরু করতে গেলে উপরে যে সমস্ত মেশিনগুলো সম্পর্কে বলা হলো এছাড়াও পিভিসি বানানোর ব্যবসাতে আরো অনেক রকম প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন ধরুন পিভিসি রেসিন, বিওপি, স্টেবিলাইজার প্রসেসিং, এসিডস, লুব্রিকেট, রং, ফিলার্স ইত্যাদি। তার সাথে সাথে বিদ্যুৎ এবং জল এর জন্য প্রয়োজনীয় ইউটিলিটি ও প্রয়োজন।
এই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য কোন বড় নামকরা পিভিসি পাইপ তৈরি করা কোম্পানি তে গিয়ে এগুলি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন এছাড়াও এই সমস্ত সামগ্রী গুলি আপনি অনলাইনে পেয়ে যাবেন অনায়াসেই। যেখান থেকে এগুলি কিনতে পারবেন আপনি।
পিভিসি পাইপ বানানোর প্রক্রিয়া:
১) এক্সট্রুশন: অন্যান্য থার্মোপ্লাস্টিক থেকে তৈরি হওয়া পাইপ এর তুলনায় পিভিসি পাইপ রেশিন ছাড়া প্রসেসিং হয় না। এই পাইপ বানানোর জন্য রেসিন এর সাথে কিছু অ্যাডিটিভস মেশাতে হয়। এই সমস্ত অ্যাডিটিভস গুলি হল:
১) প্লাস্টি সাইজার: পিভিসি পাইপ তৈরি করার জন্য প্লাস্টি সাইজার, ডি পি ও, ডিআইও পি, ডিভিপি, ডিওএ, ডিইপি, রিওপ্লাস্ট ইত্যাদি।
২) স্টেবিলাইজার: পিভিসি পাইপ তৈরি করার জন্য স্টেবিলাইজার এ লোড, বেরিয়াম, ক্যাডমিয়াম, টিন, স্টিয়ারেট ইত্যাদি শামিল থাকে।
৩) লুব্রিকেন্টস: স্টিয়ারেট, ইপক্সিডাইজড মনএস্টার অফ অলিক এসিড, স্টারিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
৪) ফিলার্স: বিশেষ গুণ সম্পন্ন এবং ভালো মানের পিভিসি পাইপ তৈরি করার জন্য এই প্রক্রিয়াটি করা হয়ে থাকে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায় এই প্রক্রিয়াতে সবকিছু উপকরণ রেসিন এর সাথে মিলিয়ে পিভিসি পাইপ বানানোর কাজ করা হয়। এবং যে আকারের পাইপ বানানো হয় তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়, তারপর বাইরে বের করার পর পাইপের উপরে মার্কিং করা হয়।
২) সাইজিং: এক্সটুডার থেকে পাইপ বাইরে বের হয়ে যাওয়ার পর সাইজিং অপারেশনে পাইপ গুলিকে ঠান্ডা করা হয়।
৩) ট্রেকশন: এরপর পাইপ গুলি কে অনবরত ধোয়ার কাজ করা হয়ে থাকে।
৪) কাটিং: এরপরে সবচেয়ে শেষ কাজ পাইপ গুলিকে কাটিং করা, পিভিসি পাইপ এর কাটিং এর জন্য দু’রকম টেকনিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন ধরুন ম্যানুয়াল এবং অটোমেটিক। এর মাধ্যমে পাইপের কাটিং করা হয় তারপর পাইপ গুলিকে আইএসআই এর মার্ক দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়।
৫) ট্রান্সপোর্ট: এতকিছু প্রসেস পেরিয়ে আসার পর পিভিসি পাইপ তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে সেগুলিকে ট্রান্সপোর্ট করতে হবে। আপনার গ্রাহকদের পিভিসি পাইপ নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা আপনাকেই করে দিতে হবে। আপনার এই ব্যবসায় ক্ষেত্রে এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়।
পিভিসি পাইপ বানানোর ব্যবসাতে মোট খরচ:
পিভিসি পাইপ বানানোর এই ব্যবসাটি শুরু করতে গেলে বিভিন্ন রকমের মেশিন, উপকরণ, কাঁচামাল, জায়গা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সাথে সাথে কর্মচারী, এই সমস্ত খরচ বাবদ আপনার বেশ কিছুটা টাকা ইনভেস্ট করতে হবে।
পিভিসি পাইপ বানানোর মেশিন বলি আপনি ২০ লাখ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। এছাড়াও উপকরণ, কাঁচামাল এবং জায়গা মিলিয়ে আরো ১০ লাখ টাকা আপনার খরচ হতে পারে।
আর এই জন্য এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য আপনার কাছে কম করে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা থাকতে হবে। তাছাড়া আপনি যখন একবার এই সমস্ত জিনিস গুলো কিনে নেবেন তারপর আর কোন রকম খরচ করার প্রয়োজন পড়বে না এই ব্যবসা করার জন্য। অনেকদিন পর্যন্ত এগুলি দিয়ে আপনি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন।
পিভিসি পাইপ বানানোর ব্যবসাতে লাভ:
যেহেতু এটি একটি বেশ বড় ধরনের ব্যবসা, সে ক্ষেত্রে অনেকটাই ইনভেস্ট করতে হচ্ছে আপনাকে। তাহলে একবার ধারণা করে দেখুন, এর কতটা পরিমাণ লাভ আপনি পেতে পারেন।
দিনদিন পিভিসি পাইপের এতটাই চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে যে, এ থেকে আপনি প্রথমে প্রতিমাসে কম করে ১ থেকে ২ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন কিছু সময় পরে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা উপার্জন করতে পারবেন। তবে এর থেকে কম হতে পারে আবার বেশিও হতে পারে।
এই ব্যবসার জন্য জায়গার প্রয়োজনীয়তা:
এই ব্যবসাটি শুরু করতে গেলে আপনি যে কোন জায়গা থেকেই শুরু করতে পারেন। আর তাই জায়গা নির্বাচন করতে গেলে যে টাকাটা আপনার খরচ করতে হতে পারে সেটা আর খরচ করতে হবে না। যে কোন জায়গা থেকেই আপনি ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
এমনভাবে আপনি নিজের একটি পিভিসি পাইপ তৈরি করার ব্যবসা শুরু করে তা থেকে অধিক পরিমাণে লাভ অর্জন করতে পারেন। যদি আপনি বড় ধরনের কোন ব্যবসার কথা চিন্তা করে থাকেন, তাহলে এই ব্যবসাটি আপনার বেশ উপকারে আসবে। কেননা এখন সমস্ত কাজে পিভিসি পাইপ ব্যবহার করা হয়। মার্কেটিং এর চাহিদা প্রচুর।