Potato Chips Manufacturing Business Idea 2024 in Bengali (আলুর চিপস বানানোর ব্যবসা 2024 – আলুর চিপস বানানোর ব্যবসা শুরু হবে লক্ষ টাকার ইনকাম): পটেটো চিপস অথবা আলুর চিপস নামটা শুনতেই অনেকেই হয়তো চিপসের প্যাকেটে কথা ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। আলুর চিপস বিভিন্ন রকমের জলখাবার এর সাথে খাওয়া হয়ে থাকে।
মুচমুচে, মুখরোচক আলুর চিপস পছন্দ করে না এমন মানুষ মেলা ভার। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই কিন্তু এই চিপস খেতে ভীষণ পছন্দ করেন।
আর এই কারনেই বাজারে বিভিন্ন রকমের কোম্পানি আলুর চিপস তৈরি করে বিক্রি করছে বাজারে। সেক্ষেত্রে বুঝতেই পারছেন এর চাহিদা কতটা।
তাই আপনি যদি কোন ব্যবসা শুরু করার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে ঘরে বসেই এবং ঘরে থেকেই ছোট আকারে আলুর চিপস তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
চলুন তাহলে আলুর চিপস বানানোর ব্যবসা সম্পর্কে জানা যাক:
ঘরে থেকে চিপস বানাতে গেলে কাঁচা মালের প্রয়োজনীয়তা:
এই ব্যবসাতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল হিসাবে বিভিন্ন রকমের আলু, যেমন সাধারণ আলু, মিষ্টি আলু, ইত্যাদি, চিপস ভাজার জন্য তেল এবং পাত্র এবং লবন, লঙ্কার গুঁড়ো ইত্যাদির প্রয়োজন হবে।
বিভিন্ন রকমের আলুর দাম:
সাধারণত বাজারে সাধারণ আলু ১২০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল, যদি আপনি মিষ্টি আলুর চিপস বানাতে চান এর জন্য আপনাকে একটু বেশি টাকা দিয়ে মিষ্টি আলু কিনতে হতে পারে, যেখানে মিষ্টি আলুর দাম ৪ হাজার ৬০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল।
আবার লবন, ১৮ থেকে ২০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম এবং লঙ্কার গুঁড়ো ১৮০ থেকে ২০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম।
ঘর থেকে চিপস বানানোর ব্যবসা যদি ছোট আকারে শুরু করেন:
আপনি যদি এই ব্যবসাটাকে খুব ছোট আকারে শুরু করতে চান তার জন্য যে সাধারণ চালু হয়, সেই আলু ব্যবহার করতে পারেন।
এই আলুর চিপস বানিয়ে ব্যবসা করার জন্য আপনার ইনভেস্টমেন্ট অনেকটাই কম পড়বে। আপনি কোন পাইকারি দোকান থেকে খুব কম দামে প্রতি কিলোগ্রাম আলু কিনতে পারেন।
এই ব্যবসা করার জন্য চিপস বানানোর মেশিন:
এই ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনি যদি খুব তাড়াতাড়ি ব্যবসাটিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে চান, সে ক্ষেত্রে আপনি মেশিন এর প্রয়োগ করতে পারেন। চিপস বানানোর ক্ষেত্রে মেশিন বানিয়ে দিতে পারবে সে ক্ষেত্রে কাজ অথবা কর্মচারী আপনার তেমন নাও লাগতে পারে।
আর যদি এই ব্যবসাটি বড় আকারে শুরু করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে মেশিন তো আপনাকে বড় নিতেই হবে, তাছাড়া আপনি এই ব্যবসাটি ছোট মেশিন দিয়েও খুব ছোট আকারে শুরু করতে পারেন। তারপর আপনার আয় বাড়ার সাথে সাথে ব্যবসা টাকে বড় আকারে নিয়ে যেতে পারেন।
আলুর চিপস বানানোর মেশিনের দাম:
চিপস বানানোর সবচেয়ে ছোট যে মেশিনটি সেই মেশিনের দাম ৩৫,০০০-৫০,০০০ টাকা। আপনি যদি চান এর থেকেও বেশি দাম দিয়ে মেশিন কিনতে পারেন। সেটা আপনার সুবিধামতো নিতে পারবেন আপনি।
ঘরে বসে আলুর চিপস বানানোর প্রক্রিয়া:
আলুর চিপস বানানো খুবই সহজ, যে কোন ব্যক্তি এই প্রক্রিয়া একবার দেখে নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
চলুন জানা যাক কিভাবে আলুর চিপস তৈরি করা যেতে পারে:-
১) সবার প্রথমে আপনাকে বাজার থেকে লাল আলু অথবা সাধারণ আলু কিনতে হবে, যেটা এই ব্যবসার প্রধান উপকরণ।
২) তারপরে আপনাকে আলু গুলি ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে, তারপর আলুর খোসা গুলি ছাড়িয়ে নিতে হবে ভালোভাবে।
৩) তারপর আলু গুলোকে স্লাইস আকারে কাটতে হবে গোল গোল করে, সে ক্ষেত্রে আপনি হাতেও স্লাইস করতে পারেন আবার মেশিনের দ্বারাও স্লাইস করতে পারেন।
৪) তারপর আলু গুলোকে কেটে নেওয়ার পর আবার ভালো করে ধুয়ে শুকাতে হবে ভালোভাবে।
৫) এরপর রোদে শুকিয়ে নেওয়া আলুর স্লাইস গুলি গরম তেলে ভাল করে ভেজে চিপস তৈরি করতে হবে।
৬) যখন আপনি আলুর চিপস গুলি ভাজবেন তখন আপনাকে তেলের তাপমাত্রার দিকটা ভালো ভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
৭) তারপর ভেজে নেওয়া আলুর চিপস গুলিতে লবণ এবং ঝালের গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর এই চিপস গুলি প্যাকিং এর জন্যে একেবারে তৈরি, তার সাথে সাথে বিক্রি ও খাওয়ার জন্য একেবারে রেডি।
আলুর চিপস তৈরির ব্যবসার জন্য জায়গার প্রয়োজনীয়তা:
প্রথমত আপনি যদি এই ব্যবসার জন্য মেশিন ব্যবহার করতে চান, তাহলে আপনার প্রায় ২০০ বর্গমিটার জায়গার প্রয়োজন পড়বে। তাছাড়া আপনি আপনার ঘরেতেও মেশিন বসিয়ে এই কাজ করতে পারেন।
তাছাড়া এই মেশিন সম্পূর্ণ অটোমেটিক সিস্টেম হয়ে থাকে। ২০০ বর্গমিটার জায়গার মধ্যে আপনি এই ব্যবসার সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
ঘরে বসে আলুর চিপস বানানোর ব্যবসার মোট খরচ:
এই ব্যবসা শুরু করতে গেলে প্রথমত আপনাকে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত খরচ করতে হতে পারে। আপনি যদি মেশিন না বসিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে চান, তাহলে আপনার খরচটা অনেকটাই কমে আসবে। কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ার ক্ষেত্রে আপনি তেমন লাভ নাও পেতে পারেন।
যদি আপনি ছোট আকারের ব্যবসা শুরু করে থাকেন সেক্ষেত্রে ১০,০০০ টাকার মধ্যে ব্যবসা আপনি শুরু করতে পারবেন ঘরে বসেই। তবে অধিক লাভের জন্য একটু বেশি পরিমাণে ইনভেস্টমেন্ট করলে আপনার ব্যবসাতেই বেশি লাভ আসবে।
এই ব্যবসার জন্য রেজিস্ট্রেশন:
আলুর চিপস যেহেতু একটি খাদ্যবস্তু, সে ক্ষেত্রে এই ব্যবসার জন্য আপনাকে রেজিস্ট্রেশন অবশ্যই অবশ্যই করাতে হবে। আপনি আপনার ব্যবসাটি ভারত সরকারের এম এস এম ই এর অন্তর্গত তে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিতে পারেন।
এছাড়াও আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে হবে, এরপরে আপনাকে আপনার ব্যবসার যে নামকরণ করেছেন সেই অনুসারে ব্যাংক একাউন্ট এবং প্যান কার্ড বানানো টা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। এছাড়াও আপনাকে আলুর চিপস এর পরীক্ষা নিরীক্ষা সরকারের খাদ্য বিভাগে করিয়ে নিয়ে FSSAI এর লাইসেন্স তৈরি করে নিতে হবে।
ঘরে থেকে আলুর চিপস বানানোর ব্যবসাতে প্রফিট অথবা লাভ:
এই ব্যবসা থেকে আপনি খুব ভালোমতো একটা প্রফিট পেতে পারেন। তাছাড়া প্রফিট অথবা লাভ আপনার বানানোর চিপসের কোয়ালিটির উপর নির্ভর করবে। বাজারে বিভিন্ন রকমের কোম্পানি আছে যারা এই আলুর চিপস বানিয়ে থাকে।
যারা কিনা ১০ টাকা প্যাকেটে খুব কম মাত্রায় চিপস দিয়ে থাকে কিন্তু এরপরেও তাদেরই আলুর চিপসের ব্যবসা বাজারে রমরমিয়ে চলছে এবং মানুষ এই চিপস গুলিকে খুব ভালোভাবে উপভোগ করার পাশাপাশি কিনেও থাকছেন।
আপনি যদি মেশিনের প্রয়োগ করেন, তাহলে প্রতি মাসে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আপনি এই ব্যবসা থেকে প্রফিট অথবা লাভ পেতে পারেন। আবার যদি এই ব্যবসাটি ছোট আকারে শুরু করে থাকেন সেক্ষেত্রে হয়তো আপনাকে মেশিন কিনতে হবেনা, তখন প্রতি মাসে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত আপনি লাভ রাখতে পারবেন এই ব্যবসা থেকে।
এই ব্যবসার মার্কেটিং:
এই ব্যবসার জন্য মার্কেটিংয়ের ভীষণ প্রয়োজন আছে, আপনি যে চিপস গুলো বানিয়েছেন শহরের বিভিন্ন দোকানে এর মার্কেটিং করতে পারেন। এছাড়াও আপনি বড় কোন কোম্পানি থেকে অর্ডার নিয়েও সেই কোম্পানির জন্য চিপস বানিয়ে দিতে পারেন।
তাতেও কিন্তু আপনি প্রফিট পাবেন ভালোমতো। শহরে এমন অনেক স্ন্যাকসের দোকান আছে ,যদি আপনি খুব ভালো কোয়ালিটির চিপস বানিয়ে থাকেন তাহলে ওইসব স্নাক্সের দোকানে আপনার বানানো আলুর চিপস দিতে পারেন, এই সব জায়গাতে আপনার বানানো আলুর চিপস খুব সহজেই বিক্রি হয়ে যাবে।
আলুর চিপস এর প্যাকেটজাত করা:
আলুর চিপস একটি মুচমুচে মুখরোচক খাবার, তাই এর প্যাকেজিংয়ের দিকটা খুব ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে। আপনাকে আপনার এই প্রোডাক্ট এর একটি সুন্দর নাম রাখতে পারেন এবং একটি সুন্দর লোগোর সাথে চিপসের প্যাকেট বানাতে পারেন।
যা কিনা চিপসের প্যাকেট টিকে ভীষণ আকর্ষণীয় করে তোলে। এমনভাবে আপনার তৈরি করা আলুর চিপস এর প্রচার হয়ে যাবে এবং টিপস গুলো খুব সহজেই বিক্রিও করতে পারবেন আপনি।
এইভাবে উপরের এই সমস্ত বিষয়গুলি ভালোভাবে ফলো করে লম্বা সময় পর্যন্ত চলতে থাকা এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন অনায়াসেই।