Start New Bamboo Plant Business Idea in Bengali – বাঁশ চাষ ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে? কত চাহিদা এই ব্যাবসার? কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন? কি কি জিনিসপত্রের প্রয়োজন হবে? জানুন সবকিছু বাঁশ চাষ ব্যবসা সম্পর্কে।
আমাদের দেশে বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে চাষাবাদ হয়ে থাকে। আর এর উপরে নির্ভর করে যেমন কৃষকদের দিনযাপন হয় তেমনি আমাদের সকলের জীবনযাপন নির্ভর করে। এমন অনেক চাষাবাদ রয়েছে যেগুলি ব্যবসার আকারে নিয়ে গিয়ে কৃষকেরা বেশ ভালো ধরনের উপার্জন করে থাকেন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে এমন অনেক জিনিসপত্র রয়েছে যেগুলি আমাদের জীবনের সাথে বেশ ভালোভাবেই জড়িত।
তেমন একটি প্রয়োজনীয় জিনিস হলো বাঁশ, ঘর তৈরির কাজে হোক অথবা আরো অন্যান্য হস্তশিল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে এই বাঁশ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যদি আপনি ব্যবসার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে এই বাঁশ আপনার ব্যবসার উপকরণ হতে পারে। আর এটি যদি আপনি নিজের কোন জমিতে চাষ করতে পারেন তাহলে মুনাফা আরও বেশি।
খুবই কম খরচ এবং কম পরিশ্রমে ভালো উপার্জন যদি করতে চান তাহলে এটি আপনার জন্য বেস্ট অপশন হতে পারে। যা কিনা একবার রোপন করার পর আর বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তাই খুব সহজেই বাঁশ এর চাষ (Bamboo Farming) করতে পারেন। তাছাড়া বাঁশ চাষ করার জন্য সরকার থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়। এই ব্যবসা এতটাই লাভজনক যে এই ব্যবসাটিকে “গ্রিনগোল্ড” অথবা “সবুজ সোনা” বলা যেতে পারে।
বাঁশ চাষ করে ব্যবসা:
দেশে এমন অনেক কম মানুষ রয়েছেন অথবা কৃষক রয়েছেন যাঁরা বাঁশ চাষ করে থাকেন। তাই এটি নিঃসন্দেহে খুবই লাভজনক ব্যবসা, তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসা সর্বদায় লাভজনকই থাকে। বাঁশের চাহিদা যত দিন যাবে তত আরো বাড়তে থাকবে।
অন্যান্য ফসলের তুলনায় এই বাঁশের চাষ খুবই সুরক্ষিত মনে করা হয় তার সাথে সাথে ভালো উপার্জনও আসবে। তাছাড়া যে কোনও ঋতুতে বাঁশ নষ্ট হয়ে যায় না, একবার যখন আপনি চাষ করে নেবেন তখন কিন্তু এটি বেশ কিছু বছর পর্যন্ত চলতে থাকে।
একবার রোপন করে ৩-৪ বছর থেকেই উপার্জন করতে পারবেন, খরচা কম, পরিশ্রম কম তাছাড়া যেখানে অন্যান্য ফসল ফলানো যায় না সেখানেও এই বাঁশ গাছের চাষ করতে পারবেন। জেনে নেওয়া যাক বাঁশ গাছ চাষ করে ব্যবসার বিষয়টি:
বাঁশের চাষ কিভাবে করবেন?
আপনার বাড়ির আশেপাশে কোথাও বাঁশ গাছ থাকলে সেখান থেকে বাঁশের চারা নিয়ে এসে রোপণ করতে পারেন অথবা নার্সারি থেকে বাঁশ গাছের চারা কিনেও লাগাতে পারেন। বাঁশ চাষ করার জন্য আপনাকে কোনরকম জমি তৈরি করতে হবে না। তবে মাটি যেন খুব একটা নরম না হয়।
২ ফুট গভীর আর ২ ফুট চওড়া গর্ত খুঁড়ে বাঁশ গাছের চারা রোপণ করতে হয়। এরপর গোবর সার দিতে পারেন, রোপন করার সাথে সাথে গাছে অবশ্যই জল দিতে হবে আর এক মাস পর্যন্ত প্রতিদিন জল দিতে হবে।
৬ মাস পর এক সপ্তাহ পর পর জল দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। এক হেক্টর জমিতে বাঁশ গাছের ৬২৫ টা চারা আপনি রোপন করতে পারবেন। শুধুমাত্র তিন মাসে বাঁশ গাছের গ্রোথ আপনার চোখে পড়বে। এছাড়া কিছু সময় পর পর বাঁশ গাছের কাটিং এবং ছাটাই করতে হয়।
তিন চার বছরে বাঁশ গাছ সম্পূর্ণ পরিপক্ক হয়ে যায় এবং সেটি কেটে বিক্রি করার জন্য তৈরি হয়ে যায়। এখানে একটি বিষয় বলে দেওয়া জরুরী যে, ভারত সরকার দেশে বাঁশ গাছের চাষ করার জন্য ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে “রাষ্ট্রীয় বাঁশ মিশন” শুরু করেছিল।
বাঁশের ব্যবহার:
সরকারের তরফ থেকে এই বাঁশ চাষের জন্য ছাড় দেওয়া হয় অথবা সাবসিডি দেওয়া হয়। কাগজপত্র বানানো ছাড়াও বাঁশের ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। কার্বণিক কাপড় বানানোর ক্ষেত্রে বাঁশের ব্যবহার করা যেতে পারে।
তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জা, বিভিন্ন বস্তু তৈরি করা, ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে এবং টেকসই কাজে বাঁশের ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আজকাল প্রায় প্রতিটি ঘরে বাঁশের ল্যাম্প, বাঁশের ঝুড়ি, বাঁশের ফার্নিচার, সবকিছুই খুবই ট্রেন্ডি এবং দৃষ্টিনন্দন। তাই বাঁশের প্রয়োজনীয়তা কতখানি তা তো ধারণা করাই যায়।
বাঁশ চাষে লাভ:
যেহেতু বাঁশ গাছ বড় হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে যদি একবার আপনার পড়ে থাকা জমিতে বাঁশ গাছ লাগিয়ে ছেড়ে দেন তাহলে দু-তিন বছরের মধ্যে আপনি সেই বাঁশ গাছ থেকে অনবরত উপার্জন করতে থাকবেন। বাঁশ গাছ ৪০ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে একবার রোপণ করার পর।
দুই থেকে তিন বছর এর পরিশ্রমের পর আপনি একটানা ৪০ বছর পর্যন্ত এর থেকে মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। বাঁশ চাষ করে চার বছরে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন, একবার বাঁশ কেটে নেওয়ার পর আবার সেই বাঁশ গাছ দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়তে থাকে।
তাই যতদিন যাবে ততই আপনার এই ব্যবসাটি বাড়তে থাকবে। শুধু তাই নয় বাঁশ গাছের চাষের সাথে সাথে আপনি সেখানে তিল, মুগ ডাল, ছোলা, আঁখ এগুলিও চাষ করতে পারবেন। এর সাথে সাথে সরষেও চাষ করতে পারবেন, যা আপনাকে অতিরিক্ত উপার্জন এনে দেবে।
বাঁশ গাছের চাহিদা প্রাচীন কাল থেকেই আছে, ঘর তৈরির কাজে ব্যবহার করা থেকে শুরু করে এখন অনেক সৌখিন জিনিস তৈরি করতেও বাঁশের প্রয়োজন হয়, আর প্রতিনিয়ত এই জিনিসপত্র তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে বাঁশের প্রয়োজন পড়ে। তাই খুব কম চাষ হওয়ার কারণে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আপনি যদি এই ব্যবসাটি করতে পারেন দুই থেকে তিন বছর সময় হাতে নিয়ে, তাহলে টানা ৪০ বছর পর্যন্ত আপনি এই ব্যবসা থেকে উপার্জন করতেই থাকবেন।