How to Start Detergent Powder Manufacturing Business in Bengali – ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে? জানুন সবকিছু ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরির ব্যাবসা সম্পর্কে।
ডিটারজেন্ট পাউডার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করার জন্য প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। কাপড় ধোয়ার কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকমের ব্রান্ডের ডিটারজেন্ট পাউডার মার্কেটে ভীষণভাবে এভেলেবেল। বাজারে দোকানে বিভিন্ন রকমের ডিটারজেন্ট পাউডার পাওয়া যায়।
যার দাম অনেক সময় অনেক বেশি হয়ে থাকে। বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের ব্র্যান্ড এর ডিটারজেন্ট খুব সহজেই বিক্রি করে আসছে। আপনিও কিন্তু আপনার একটি নতুন ডিটারজেন্ট এর ব্রান্ড তৈরি করে সাধারণভাবে মার্কেটে বিক্রি করতে পারেন।
আর এই ব্যবসা থেকে আপনি প্রচুর পরিমাণে উপার্জন করতে পারবেন। প্রতিনিয়ত এই ডিটারজেন্ট পাউডার এত হারে ব্যবহার হচ্ছে যে, এই ব্যবসা থেকে আপনি ভালভাবে উপার্জন করতে পারবেন ভাল ভাবে বলা যায়।
তো চলুন তাহলে জানা যাক কিভাবে ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি করে আপনি আপনার ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন:
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী:
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর জন্য বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র, যেমন রাসায়নিক সামগ্রী ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যে সামগ্রী গুলি ব্যবহার করা হয় ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি করার ক্ষেত্রে সেগুলি হল:
১) অ্যাসিড সলরি
২) এ ও এস
৩) ডি কোল
৪) CBX
৫) গ্লোবার সল্ট
৬) কালার সল্ট
৭) সোডা অ্যাশ
৮) ডলোমাইট
৯) ট্রাই সোডিয়াম ফসফেট
১০) সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেট
১১) কারবক্সি মিথাইল
১২) পারফিউম আর ব্রাইটনার
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর জন্য মেশিন এর প্রয়োজনীয়তা:
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর জন্য তিন রকমের মেশিন এর প্রয়োজনীয়তা পড়বে আপনার, এই তিন রকমের মেশিন এর মধ্যে মিক্সার মেশিন, স্ক্রিমিং মেশিন এবং সিলিং মেশিন হয়ে থাকে, এই তিন রকমের মেশিনের কাজ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
#১) মিক্সার মেশিন: এই মেশিনের মাধ্যমে গ্লোবার সল্ট, সোডা অ্যাশ, রং ইত্যাদি একসাথে মেলানোর কাজ করা হয়ে থাকে।
#২) স্ক্রিমিং মেশিন: এই মেশিনের সহযোগিতায় তৈরি হওয়া ডিটারজেন্ট কে একেবারেই মিহি আকারে তৈরি করা হয়।
#৩) সিলিং মেশিন: এই মেশিনের সহযোগিতায় প্যাকেটগুলোকে সিল করা হয়ে থাকে।
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর জন্য মেশিনের দাম:
এর জন্য ৪৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ লাখ পর্যন্ত মেশিন আপনি পেতে পারেন। যদি আপনি ৪৫০০০ এর রেঞ্জে ডিটারজেন্ট মেকিং মেশিন নিয়ে থাকেন তাহলে এ থেকে আপনি ডিটারজেন্ট পাউডার বানিয়ে তো নেবেন, কিন্তু প্যাকেজিং এর জন্য আপনি মেশিন এর সুবিধা কিন্তু পাবেননা।
৭৫ হাজার টাকার যে মেশিন পাওয়া যায় সেই মেশিন এর সাথে আলাদা করে আপনাকে সিলিং মেশিন দেওয়া হবে। আর ৩ লাখ টাকার যে মেশিন পাওয়া যায় এটা কিন্তু পুরো একটা সেট, যার মধ্যে মিক্সার মেশিন থেকে সিলিং মেশিন পর্যন্ত আপনি পেয়ে যাবেন।
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর জন্য মেশিন কোথায় থেকে কিনবেন:
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর জন্য যে সমস্ত মেশিন আপনার প্রয়োজন পড়বে, সেগুলি অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও কিনতে পারেন, ওয়েবসাইটগুলো নিচে দেওয়া হল:
Detergent Powder Mixer Machine | View Details |
Soap Detergent Soap Plant | View Details |
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর ব্যবসাতে ইনভেস্টমেন্ট:
এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য আপনার যে খরচ হবে সেটা কম করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, আর এই টাকার মধ্যে আপনার মেশিন এর দামও এর উপর নির্ভর করবে। এই যে, আপনি কেমন দামের মেশিন নিতে চাইছেন।
যদি আপনি মেশিন কম দামে নিতে পারেন, যেমন ধরুন ৭৫ হাজার টাকার কাছাকাছি দামের মেশিন নিয়েও ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। তখন কিন্তু আপনার ইনভেস্টমেন্ট ২.৫ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকার মধ্যে হতে পারে।
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর প্রক্রিয়া:
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর জন্য যে প্রক্রিয়া গুলি আছে সেগুলি হল:
#১) সবার প্রথমে অ্যাসিড স্লরি নিতে হবে, এরমধ্যে এ ও এস দেওয়া প্রয়োজন, এরপর এর মধ্যে ডি কোল দিতে হবে।
#২) ডি কোল দেওয়ার পর এর মধ্যে যে রাসায়নিক পদার্থ গুলি দেওয়া হবে, সেগুলির যে ক্ষতিকারক দিক থাকে সেগুলো অনেকটাই কমে যায়।
#৩) এরপর এর মধ্যে CBS X দিতে হবে, এই তিনটি জিনিস একসাথে একটি কনটেইনারে ভালো করে মেশাতে হবে। এরমধ্যে cbs-x ভালো করে মেশানটা প্রয়োজন।
#৪) এরপর সমস্ত পাউডার ফরম এ নেওয়ার জন্য মিক্সার মেশিনের ব্যবহার করতে হবে। এই মিক্সার মেশিনে ৩৫ কিলো গ্লোবার সল্ট, ৫ কিলো সোডা অ্যাশ, ৫ কিলো ডলোমাইট, ট্রাই সোডিয়াম ফসফেট, কালার সল্ট, মেশাতে হবে।
এই মিশ্রণটিকে ডাইরেক্ট এবং রিভার্স দু রকম ভাবে চালানো যাবে, যাতে এই সমস্ত জিনিস গুলো ভালোভাবে মেশান যেতে পারে।
#৫) এরপরে এরমধ্যে কালার সল্ট, হোয়াইটনার এবং পারফিউম দিতে হবে, কালার সল্ট দেওয়ার পর ডিটারজেন্টের রং আকর্ষণীয় এবং পারফিউম দেওয়ার পর এর মধ্যে একটি সুন্দর গন্ধ চলে আসে।
#৬) এরপরে এই মেশিনে প্রথমেই বানানো অ্যাসিড স্লোরি ঘোল মিশাতে হবে, এই সময়ের মধ্যে সোডিয়াম ট্রাই পলি ফসফেট আর কারবক্সি মিথাইল সেলুলোজ মেশাতে হবে।
#৭) একবার সমস্ত রাসায়নিক ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়ার পর ১২ ঘন্টার জন্য শুকনো হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে। যখন এটা সম্পূর্ণরূপে শুকনো হয়ে তৈরি হয়ে যাবে তখন মোটা ঢেলা আকারে তৈরি হয়ে যাবে।
তারপর এটিকে পাউডার আকারে নিয়ে আসার জন্য স্ক্রিমিং মেশিনের সহযোগিতা নিতে হবে। স্ক্রিমিং মেশিনের মধ্যে দিয়ে ডিটারজেন্ট পাউডার মিহি আকারে তৈরি করতে হবে।
#৮) এইভাবে আপনি ডিটারজেন্ট তৈরি করতে পারবেন এইরকম পদ্ধতি অবলম্বন করে তারপরে ডিটারজেন্ট গুলিকে প্যাকেট করে মার্কেটে বিক্রি করতে পারবেন।
ডিটারজেন্ট পাউডারের প্যাকেজিং:
যে কোন জিনিসের প্যাকেজিং আকর্ষণীয় হওয়া দরকার, তবেই তো গ্রাহক বেশি আকর্ষিত হবে। প্যাকেজিং এর জন্য আপনি আপনার ব্রান্ডের প্যাকেট ব্যবহার করুন।
আর যদি আপনি কোন কোম্পানি থেকে এই কাজ পেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে সেই কোম্পানির ব্র্যান্ডের প্যাকেট ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া নিজের একটি ভালো ব্র্যান্ড ব্যবহার করে সেটিও প্যাকেজিং এর জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
#১) প্যাকেজিং করার আগে এই বিষয়ের উপরে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, একটি প্যাকেটে আপনি কতটা ডিটারজেন্ট পাউডার দিতে পারবেন। আপনি এক কিলো প্যাকেট বানাবেন, নাকি হাফ কিলো প্যাকেট বানাবেন। সেটা আগে থেকে নির্বাচন করতে হবে।
#২) আপনার ব্র্যান্ডকে প্রমোট করার জন্য এবং প্যাকেট আকর্ষণীয় করার জন্য প্যাকেটের উপরে লেবু এবং বিভিন্ন রকমের সুগন্ধি ফুলের ছবি আপনি ছাপাতে পারেন।
#৩) প্যাকেজিং করার জন্য সিলিং মেশিন এর প্রয়োজন পড়বে। এই মেশিনের মাধ্যমে প্যাকেট গুলো খুবই সহজ এবং ভালোভাবে তৈরি হয়ে যাবে, আর দেখতেও বেশ আকর্ষণীয় লাগবে।
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর ব্যবসাতে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স:
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর জন্য আপনি কোন এলএলপি, ওপিসি ইত্যাদির অন্তর্গত রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিন। তারপর আপনার ব্যবসার একটি ব্যাংক একাউন্ট বানাতে হবে।
এর সাথে সাথে পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড থেকে কনসেন্ট টু স্টাবিলিস এবং কন্সেন্ট টু অপারেট দুই রকম লাইসেন্স আপনাকে করে রাখতে হবে।
কোয়ালিটি কন্ট্রোল এর জন্য BIS রেজিস্ট্রেশন করা কিন্তু জরুরি। এর সাথে সাথে আপনার ব্রান্ড অথবা ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রাখাটাও জরুরি।
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর ব্যবসাতে মারকেটিং:
এই ব্যবসার জন্য মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে আপনি হোলসেল এবং রিটেল দু রকম ভাবে মার্কেটিং করতে পারেন। আপনি আপনার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ওই সমস্ত দোকানেও করতে পারেন, যারা রিটেল এ জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকেন।
এই সমস্ত দোকানে আপনার বানানো ডিটারজেন্ট পাউডার অধিক লাভ রেখে বিক্রি করতে পারেন, এছাড়াও হোলসেল দামে বড় দোকানেও আপনার তৈরি ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করতে পারেন।
ব্রান্ডের প্রচারের জন্য হোর্ডিং, পোস্টার এবং খবরের কাগজে আপনি বিজ্ঞাপন দিতে পারেন, যদি প্রথমে আপনি আপনার তৈরি প্রোডাক্টে কিছুটা পরিমাণ অফার দিতে পারেন তাহলে তো আরো বেশি পরিমাণে মার্কেটে বিক্রি হবে আপনার তৈরি করা ডিটারজেন্ট পাউডার।
এইভাবে আপনি ৪ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকার ভিতরে এমন একটি ব্যবসা তৈরি করে নিতে পারবেন। যেটা আপনি long-term বিজনেস হিসাবে শুরু করতে পারেন। কেননা এই ব্যবসাটি সবসময়ের জন্য চলতে থাকা একটি ব্যবসা।
ডিটারজেন্ট পাউডার বানানোর ব্যবসাতে লাভ:
যেহেতু খুব কম টাকা ইনভেস্ট করে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারছেন, তাহলেও কিন্তু আপনি এই ব্যবসা থেকে ভালোমতো উপার্জন করতে পারবেন। কেননা, দৈনন্দিন জীবনে এই ডিটারজেন্ট পাউডার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, বিশেষ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে আর তাই প্রতিনিয়ত এর চাহিদা থেকেই যাচ্ছে।
সেই কারণে এই ব্যবসাটি থেকে আপনি প্রতিমাসে কম করে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন অনায়াসেই।
তবে প্রতিটি ব্যবসাতে ধৈর্য, পরিশ্রম বুদ্ধিমত্তা সবকিছু দিয়েই তবে ব্যবসায় সফল হওয়া যায়। আর তাই সব কিছুর সাথে সাথে ধৈর্য কিন্তু রাখতে হবে। কেননা কোনো মানুষই একদিনে সফল হতে পারেননি।