Dates Farming Business Idea 2024 in Bengali (খেজুর চাষের ব্যবসা 2024): খেজুর চাষের ব্যবসা শুরু করে প্রতিমাসে প্রচুর রোজগার করুন। জানুন কিভাবে খেজুর চাষের ব্যবসা শুরু করবেন? কত খরচ ও কত লাভ হবে? জানুন সবকিছু এখানে (How to start a Dates Farming Business in Bengali)
আরবে খেজুরের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এর সাথে সাথে কোরআন শরীফে এই খেজুরকে পবিত্র ফল হিসেবে সবাই মেনে থাকেন। খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সুগার, ক্যালসিয়াম, নিকোটিনিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম এবং আয়রন থাকে।
খেজুর পাম জাতীয় গাছের মধ্যে পড়ে। আর ট্রপিক্যাল ক্লাইমেটিক কন্ডিশন এ খেজুর উৎপাদন হয়। তাছাড়া মরুভূমির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল হলো খেজুর। কিন্তু এখন এই খেজুর কৃষি কাজের মাধ্যমে সব জায়গাতেই ভালোভাবে উৎপাদন করা যাচ্ছে।
খেজুরের বিবরণ:
খেজুর উৎপাদন হল বিশ্বের কৃষি উদ্যোগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খেজুরের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ এশিয়া এলাকাতে করা হয় বেশি পরিমাণে। ভারতে রাজস্থান এবং দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু আর কেরালাতে এর উৎপাদন হয়ে থাকে।
খেজুরের প্রকারভেদ:
যেহেতু পৃথিবীতে বিভিন্ন রকমের প্রজাতির খেজুর আছে কিন্তু ভারতে এক হাজারেরও বেশি প্রজাতির খেজুর পাওয়া যায় যেমন ধরুন- বরি, মেদজুল, শামরন, খাদারোয়ে, হালবি, জাহিদি, খলাস, বাইল্ড ডেট পাম ও সামিল আছে। ইজরাইলে সাত প্রকারের খেজুর উৎপাদন করা হয় যেমন- বরি, ডিগ্লন্ট নুর, হলাবী, খাদারওয়ে, থুরী ইত্যাদি।
খেজুর উৎপাদন প্রক্রিয়া:
খেজুর উৎপাদনের জন্য চাষীকে শুধুমাত্র বীজ এর উপর নির্ভর করাটা প্রয়োজন নয়। কেননা বীজ থেকে ফল উৎপাদনের গুণমান খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
মাদার খেজুর গাছ যার বয়স কম করে চার থেকে পাঁচ বছর হতে হবে সেই গাছ থেকে ভালোমতো খেজুর চাষ করা যায়, এই গাছের জীবন কালে ৪ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৯ থেকে ১৫ কিলো পর্যন্ত ৯ থেকে ২০ বার খেজুর পাওয়া যায়। এই কারণে এই খেজুর চাষের অনেকটাই সময় এবং পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে। টিস্যু কালচার টেকনিক খেজুর উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত টেকনিক।
খেজুর উৎপাদন হতে কত সময় লাগে?
বেশিরভাগ খেজুর এর গাছ মাদার গাছের পাপস থেকে লাগানো হয়। এগুলিকে ট্রানস্প্লান্ট করার উপযুক্ত হতে প্রায় ছয় থেকে আট বছর লেগে যায়। এরপর ৬ থেকে ৭ বছর পর এই গাছ ফল দিতে শুরু করে।
খেজুর চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ক্লাইমেট:
খেজুরের উৎপাদন ভালো হওয়ার জন্য কম আর্দ্রতা এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসের প্রয়োজন হয়। এর জন্য সারাদিন ভালো রোদ পাবে এমন জায়গা খেজুর চাষের জন্য উপযুক্ত। তার সাথে সাথে রাতের তাপমাত্রা যেনো কম থাকে। এর জন্য কোনরকম বর্ষার প্রয়োজন পড়ে না বিশেষ করে ফল আর ফুলের সময়ে।
খেজুর উৎপাদনের জন্য ১২০ ডিগ্রি তাপমাত্রা এবং ৩ ইঞ্চি প্রতি বর্ষা যথেষ্ট। আর এই কারণে খেজুর চাষ মরুভূমি অঞ্চলে বেশি করা হয়।
ডেট ট্রি এর পাশে এক ধরনের বিশেষ প্রকারের বর্ডার খোদাই করা হয় যাতে সমস্ত রকম জলকে একত্রিত করতে পারে। যার ফলে ডেট ট্রি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পেতে পারে। প্রত্যেক গাছের গোড়ায় প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজার গ্যালন পর্যন্ত জল প্রয়োজন হয়। এই বর্ডার সংরক্ষিত করে এবং জংলি ঘাস, গাছপালা উৎপাদন থেকে আটকাতে পারে।
আগস্ট মাসের পাশাপাশি খেজুর গাছের ডাল গুলিকে কেটে দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে গাছের আসল গুড়ি যেখানে খেজুর উৎপাদন হবে সেটাকে বিশেষভাবে ধ্যান রাখা হয়।
খেজুর চাষের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি:
খেজুর উৎপাদনের জন্য ভালো ড্রেন ব্যবস্থা যুক্ত মাটির প্রয়োজন হয়। যেখানে pH8 থেকে pH10 এর মধ্যে হতে হবে মাটির নমনীয়তা অর্থাৎ আদ্রতা শুষে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।
খেজুর লবণ এবং অ্যালকালাইন মাটিতে বেশি উৎপাদিত হয়। মাটি ক্যালসিয়াম কার্বনেট মুক্ত হতে হবে। আর গাছের গোড়া বিকশিত হওয়ার জন্য ২.৫ মিটার পর্যন্ত কোনরকম মাটির কঠিনতা থাকলে চলবে না।
উৎপাদিত খেজুর সংগ্রহ:
প্লান্টিং করে নেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছরের পর খেজুর সংগ্রহ করা জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। খেজুর সংগ্রহ খেজুরের পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে কিন্তু ভারতে খেজুর “ডোকা” স্টেজে সংগ্রহ করা হয়।
খেজুরের প্যাকেজিং:
১) গোছা ধরে প্যাকেট: খেজুরের প্যাক করার জন্য লম্বা কার্ডবোর্ডের বাক্সতে দুটো গোছায় প্যাক করা হয়। এর মোট ওজন হয় ১০ কিলো আর এর কোয়ালিটি ৫ কিলো বাক্সে প্যাক করার ফলের মত।
২) বুকেট: কার্ডবোর্ডের ট্রে একটি সেলফোন ব্যাগের ৩ থেকে ৫ গোছার প্যাক করা হয় খেজুরের। খেজুরের ডাল গুলিকে একসাথে বাঁধা হয়। প্যাক এর ওজন ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম হয়। আর এতে কর্মচারী বেশি প্রয়োজন হয়।
খেজুর স্টোর এন্ড রেফ্রিজারেশন:
খেজুর বিক্রি করা পর্যন্ত স্টোর করে রাখতে হয়। এবং সেগুলিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হয়। তাছাড়া ডেকলেট নূর খেজুর ০ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। রেফ্রিজারেশন করার পর ফলগুলি গাঢ় রঙের হয়ে যায়।
খেজুর চাষের ব্যবসার জন্য মার্কেটিং:
খেজুর যেহেতু একটি ড্রাই ফুড, প্রতিঘরে এর চাহিদা প্রচুর। তাছাড়া উৎসব অনুষ্ঠানে আরো বেশি এর চাহিদা বেড়ে যায়। তাই সে ক্ষেত্রে খবরের কাগজ, সোশ্যাল মিডিয়া, টিভিতে আপনি বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে এগুলির মার্কেটিং করতে পারেন। এছাড়া শপিংমলে চড়া দামে বিক্রি হয় প্যাকেট করা খেজুর।
খেজুর চাষের জন্য জায়গার প্রয়োজনীয়তা:
আপনার কাছে যদি খেজুর চাষের উপযুক্ত মাটি সম্পন্ন জমি থাকে, তাহলে অনায়াসেই আপনি আপনার জমিতে খেজুর চাষ করতে পারেন, খেজুর চাষের পদ্ধতি জেনে। এখন তো এই সমস্ত খেজুর প্রায় ভারতের কোণে কোণে চাষীদের চাষ করতে দেখা যায়। অনেকে ঘরে শখের কারণে একটা দুটো গাছ লাগিয়ে খেজুর উৎপাদন করছেন।
খেজুর চাষের ব্যবসা থেকে লাভ:
সারাবছর খেজুর বিক্রি হওয়ার সাথে সাথে রমজান মাসে এর চাহিদা আরো বেশি বেড়ে যায় এবং বিক্রি হয় বহুগুণে। আর সেই কারণে আরবের খেজুর প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, এবং আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই উন্নত হয়েছে খেজুর ব্যবসাতে। বলতে গেলে বিশেষ করে যদি চাষ করে ব্যবসা করতে পারেন তাহলে কোটি টাকা লাভ পাওয়া যায় এই ব্যবসা থেকে।
হয়তো প্রথম দুই এক বছর আপনি কোনরকম লাভের মুখ দেখতে পাবেন না। তবে ফসল উৎপাদন হওয়া শুরু হলে আপনি এর থেকে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন করতে পারবেন তবে প্রথমত আপনাকে একটু পরিশ্রম ও খেয়াল রাখতে হবে খেজুর উৎপাদনের জন্য।