Oil Mill Business Idea in Bengali 2024 (তেলের মিল ব্যবসা 2024) – তেল এর মিলের ব্যবসা করবেন কিভাবে? কি কি প্রয়োজন হবে? কত টাকা লাগবে? জানুন সবকিছু।
তেলের ব্যবহার সব ঘরেই হয়ে থাকে। আর যার কারণে বিভিন্ন রকম তেলের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে চলেছে। তাছাড়া আমাদের দেশে ব্যবসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেশ সফল। আর তাই আপনি যদি ব্যবসার কথা চিন্তা করে থাকেন, তাহলে বিভিন্ন রকমের তেল বিক্রি করার ব্যবসা শুরু করতে পারেন, অথবা তেলের মিল খুলেও ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
তবে এই সম্বন্ধে আপনার ভালো মত একটা ধারণা থাকা প্রয়োজন। তেলের ব্যবসাতে প্রচুর লাভ পাওয়া যায়। অনায়াসেই আপনি এই ব্যবসা শুরু করে ইনকাম করতে পারবেন।
বাজারে বিভিন্ন রকম তেলের চাহিদা:
ভারতের প্রত্যেকটি ঘরে খাবার তৈরি করার জন্য অথবা রান্না করার জন্য তেলের প্রয়োজন হয়। যার মধ্যে অনেকেই সরষে তেলের ব্যবহার করে থাকেন, আবার কেউ তিলের তেল, নারকেল তেল, অলিভ অয়েল ইত্যাদির ব্যবহার করে থাকেন রান্না করার জন্য।
এছাড়াও চুলে ব্যবহার করার জন্য তেল বিশেষ প্রয়োজনীয়। আর এই কারণে আপনি যদি তেলের মিল খুলতে চান তাহলে অনেকগুলো অপশন পাবেন এই ব্যবসা করার জন্য।
তেলের মিল আসলে কি:
তেলের মিল এর সাহায্যে বীজ গুলিকে পেশাই করে তা থেকে তেল বের করা হয়। তারপর সে তেলকে বোতলে ভরে প্যাক করে বিক্রি করা হয়। তাছাড়া মিল শুরু করার আগে বিভিন্ন রকমের মেশিন আপনাকে কিনতে হতে পারে।
তবে আপনাকে নির্বাচন করতে হবে যে আপনি কোন ধরনের তেল বাজারে বিক্রি করতে চাইছেন। আর কোন তেলের মিল আপনি শুরু করতে চান। যেমন ধরুন সরষের তেল, তিলের তেল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি।
তেলের মিল ব্যবসার স্তর:
১) যে কোনো রকমের তেলের মিল থেকে প্রতিদিন মেট্রিক টন হিসাব অনুযায়ী তেল বের করা হয়। এই ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনি ছোট, মাঝারি স্তর এবং বড় স্তরে উদ্যোগ নিয়ে শুরু করতে পারেন।
২) তেল তৈরি করা মিল থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মেট্টিক টন তেল উৎপন্ন করা হয়। এটা সবচেয়ে ছোট স্তর এর ক্ষেত্রে। আবার মাঝারি স্তরে ১০ থেকে ৫০ মেট্রিক টন তেল উৎপন্ন করা যেতে পারে। আর সবচেয়ে বড় স্তরে ৫০ মেট্রিক টনের ও বেশি তেল উৎপন্ন করা যায় প্রতিদিন।
তেলের মিল শুরু করার জন্য র মেটেরিয়ালস অথবা কাঁচামাল:
কাঁচামাল হিসেবে যে বীজ থেকে তেল উৎপন্ন হয় সেগুলোই তো প্রয়োজন। যেমন ধরুন সরষে, সূর্যমুখী, তুলো, তিল, অলিভ, বাদাম ইত্যাদি যা থেকে তেল উৎপন্ন হতে পারে। যারা বীজ বিক্রি করে থাকেন সেই দোকান থেকে অথবা কোন চাষির কাছ থেকে আপনি এগুলো কিনতে পারেন।
তাছাড়া আপনি যদি মনে করে বাজার থেকে কেনার পরিবর্তে এই বীজ এর যোগানের জন্য আপনি নিজেই এগুলি চাষ করতে পারেন। নিজের বীজ উৎপন্ন করার জন্য হয়ত একটু সময় আপনার লাগতে পারে, তবে সে ক্ষেত্রে লাভবান হবেন আপনি নিজেই।
তেলের মিল ব্যবসার জন্য মেশিন:
অনেক রকম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তবেই বীজ থেকে তেল উৎপন্ন হয়। আর সেই জন্য বিভিন্ন রকমের আলাদা আলাদা রকমের মেশিন প্রয়োজন। যেমন ধরুন স্ক্রু এক্সপ্লোর, কুকার এন্ড ফিল্টার প্রেস মেশিন, এর ব্যবহার আলাদা আলাদা প্রক্রিয়াতে করা হয়ে থাকে।
তাছাড়া আপনার এই ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণ অটোমেটিক সিস্টেম মেশিন ব্যবহার করতে পারেন। অথবা হাফ অটোমেটিক মেশিনও ব্যবহার করতে পারেন। এই মেশিনগুলো আপনি অনলাইনের মাধ্যমে কিনতে পারবেন:-
Press High Quality Oil Extraction Machine | View Details |
Small Oil Extraction Machine | View Details |
এই সমস্ত লিংকের মাধ্যমে মেশিন গুলি আপনি কিনতে পারবেন। তাছাড়া এই মেশিনের দাম মেশিনের কোয়ালিটির উপরেই নির্ভর করবে।
তেল উৎপাদন প্রক্রিয়া:
তেল উৎপাদন প্রক্রিয়া বিভিন্ন রকমের পদ্ধতির মাধ্যমে এবং মেশিন এর সহযোগিতায় যে কোনো রকমের বীজ থেকে তেল বের করা হয়ে থাকে।
১) ভালো বীজ বাছাই করা:
যে বীজ থেকে তেল উৎপাদন করতে চাইছেন সেই বীজ গুলি যেন খুবই ভালো মানের হয়ে থাকে। আর সেই কারণে যখন সেগুলিকে কিনবেন ভালো করে দেখে কিনবেন। যেন সেগুলো পোকা ধরা এবং ভাঙ্গা না থাকে। আবার অতিরিক্ত শুকনো যেন না হয়, সেদিকেও কিন্তু খেয়াল রাখবেন।
২) বীজ গুলিকে পরিষ্কার করা:
যখন কোন বীজ উৎপন্ন হয় তখন তার মধ্যে বিভিন্ন রকমের নোংরা আবর্জনা, শুকনো গাছের কিছু অংশ থেকে যায়। সবার প্রথমে বীজ গুলি থেকে পাথর, মাটির টুকরো বিভিন্ন রকমের আবর্জনা পরিষ্কার করে বাছাই করে নিতে হবে। আর এতে আপনার উৎপাদিত তেলের গুনাগুন ঠিক থাকবে।
তাছাড়া কাঁকর, বালি, পাথরের টুকরো থাকলে সেগুলি মেশিনের মধ্যে আটকে গিয়ে মেশিন খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই সব সময় ভালো বীজ দেখে কিনবেন এবং ভালো করে পরিষ্কার করে নেবেন। তবে হাত দিয়েও পরিষ্কার করতে পারেন আবার মেশিনের দ্বারাও পরিষ্কার করতে পারেন।
৩) Decortication পদ্ধতিতে বীজ পরিষ্কার করা:
শস্য বীজ এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন রকমের ভুষি, পরিষ্কার করার জন্য ব্লইং এয়ার (Blowing air) এর সাহায্যে পরিষ্কার করা হয়। যার মাধ্যমে বীজ গুলি একেবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।
৪) বীজের কন্ডিশনিং:
এই পদ্ধতির মাধ্যমে বীজ থেকে অধিক পরিমাণে তেল উৎপন্ন করা যায়। আর সেইজন্য বীজ গুলিকে রোলার এর মধ্যে দেওয়া হয়। আর এই রোলার এর মধ্যেই বীজ পেশাই হওয়ার মাধ্যমে তেল উৎপন্ন হয়ে থাকে।
৫) বিচ গরম করা:
কন্ডিশনিং করার পর আপনাকে বীজ গুলিকে গরম করতে হবে। যাতে তার মধ্যে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। তাছাড়া এই সময় তাপমাত্রা দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। আর সেই কারণে আপনি যে বীজ থেকে তেল তৈরি করবেন সেই অনুযায়ী আপনার তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হবে।
৬) তেল উৎপাদন করা:
উপরের প্রক্রিয়া গুলি সম্পন্ন হয়ে গেলে বীজ থেকে তেল বের করা হয়ে থাকে। মেশিনের মাধ্যমে বীজগুলোকে ভালো করে পেশাই করে তেল বের করা হয়। তারপর একটি পাত্রে তেল গুলিকে সংগ্রহ করা হয়।
৭) ছেঁকে নিতে হবে:
তেল বার হয়ে যাওয়ার পর বীজ এর কিছু অংশ তেলের মধ্যে থেকে যেতে পারে, তাই তেল গুলিকে ভালো করে ছেঁকে নিতে হবে। তাতে ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে যাবে তেল এরপর তেলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক পদার্থ গুলিকে নিঃসরণ করা হয়।
উপরের এই কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে তেল উৎপাদন করতে পারবেন এবং সেগুলিকে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। তেল ভরার জন্য বোতল গুলি আপনাকে বানিয়ে আনতে হবে অন্য ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। তার সাথে সাথে বোতলের গায়ে লেভেলিং করতে হবে। যার ফলে আপনার ব্যবসার প্রচার টাও হয়ে যায়।
তেলের মিল ব্যবসার জন্য লাইসেন্স:
তেলের মিল ব্যবসা শুরু করতে গেলে আপনাকে বিভিন্ন রকমের লাইসেন্সের আবেদন করতে হবে এবং লাইসেন্স হয়ে যাওয়ার পরেই আপনার উৎপাদিত তেল বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।
ভারত সরকার দ্বারা খাবার জিনিসের সাথে জড়িত দুই রকমের লাইসেন্স দেওয়া হয় যার মধ্যে একটি লাইসেন্স ভারতীয় মানক ব্যুরো, আর আরেকটি লাইসেন্স এফ এস এস এ আই এর দ্বারা দেওয়া হয়।
এছাড়াও এই ব্যবসা করার জন্য আপনি যে রাজ্যে শুরু করবেন ব্যবসাটি সেই রাজ্য সরকারের থেকে বিভিন্ন রকমের লাইসেন্স করে নিতে পারবেন আপনি।
তেলের মিল খোলার জন্য জায়গা নির্বাচন:
আপনার ব্যবসার জন্য তেলের মিল সেই জায়গাতেই খুলুন যেখানে ট্রান্সপোর্টেশন এর সুবিধা আছে এবং কাঁচামাল গুলি কে আপনার ফ্যাক্টরি পর্যন্ত নিয়ে আসার জন্য বেশি সময় যেন না লাগে। ট্রান্সপোর্টেশন এর মাধ্যমে আপনার বেশি খরচ পড়বে না।
এছাড়াও আপনার এই ফ্যাক্টরি খোলার জন্য যদি জায়গার সন্ধান করে থাকেন, তাহলে আপনার শহরে অথবা গ্রামে বিভিন্ন সাইট দেখতে পারেন, যেখানে ফ্যাক্টরি ভাড়াতে দেয়া হয়ে থাকে।
তেলের মিল ব্যবসার পরিকল্পনা করুন:
মিল শুরু করার আগে আপনাকে একটি ব্যবসা পরিকল্পনা করতে হবে অর্থাৎ বিজনেস প্লান থাকাটা জরুরী। যেখানে আপনি এই মিল কিভাবে খুলবেন আবার এই ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন রকমের ঝুঁকি সম্পর্কে ও খেয়াল রাখবেন। যাতে আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে গেলে আপনি সফলতা পাবেন।
তেলের মিল শুরু করতে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা মাথায় রাখতে হবে:
১) তেল ফিল্টার হয়ে যাওয়ার পর তা কিন্তু শুধুমাত্র ১৮ মাস অর্থাৎ দেড় বছর ভালো থাকে এই জন্য তেল বিক্রি করার জন্য আপনার নেটওয়ার্ক খুব ভালো হওয়া দরকার। যাতে যখনই আপনার তেল উৎপাদন হয়ে তৈরি হয়ে যাবে, আপনি সাথে সাথে হোলসেল বিক্রেতার মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।
২) যে কর্মচারী গুলি কে আপনি কাজে রাখবেন তাদেরকে কিভাবে তেল বের করা হয় তার ট্রেনিং কিন্তু দিয়ে নিতে হবে। যার ফলে তারা ভালোভাবে এবং খুব সহজভাবে মেশিন গুলিকে চালাতে পারে এবং তার মাধ্যমে তেল উৎপাদন করতে পারে। কোনো রকম অসুবিধা যেন তাদের না হয়।
৩) আপনি যে বীজ থেকে তেল উৎপাদন করতে চাইছেন সেই বীজ অনুযায়ী আপনাকে মেশিন কিনতে হবে অর্থাৎ আপনি যদি বাদাম তেল উৎপাদন করতে চান তাহলে বাদাম সোলার মেশিন আপনার প্রয়োজন পড়বে। কেননা আলাদা আলাদা তেল উৎপাদন করার জন্য আলাদা আলাদা মেশিন এর প্রয়োজন আছে। একরকম বীজের তেল তৈরি করা মেশিন দিয়ে অন্য বীজের তেল উৎপাদন করা যাবে না।
৪) আপনি ব্যবসা টাকে আরো বড় করতে পারেন আর একরকম বীজের তেল বিক্রি করা ছাড়াও দুই তিন রকমের তেল উৎপাদন করে আপনি বিক্রি করতে পারেন। এতে আপনার সুবিধা এবং উপার্জন টাও অনেক বেশি।
তেলের মিল ব্যবসার ক্ষেত্রে লাভ:
যদিও ইনভেস্টমেন্ট বীজ কেনা এবং মেশিনের উপরে নির্ভর করে, আবার মেশিন বিভিন্ন রকমের, বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে। তবে খুবই অল্প স্তরে যদি আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করেন তাহলে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করা যায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
তেল এর মিল শুরু করার আগে এই মিলের ইনসিওরেন্স অবশ্যই করিয়ে নেবেন। তার সাথে সাথে যদি সম্ভব হয় তাহলে কিভাবে তেল উৎপাদন করা হয় তার ট্রেনিং টাও কিন্তু নিয়ে রাখতে পারেন। তার ফলে এই ব্যবসাটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আপনার কোন রকম সমস্যা হবে না। যদিও বা কোন সমস্যা হয় সেটা আপনি নিজে থেকে সমাধান করতে পারবেন।