Ball Pen Making Business Idea 2024 (পেন তৈরির ব্যবসা 2024): How to Start Ball Pen Making Business in India? | Pen Making Business Idea in Bengali | Pen Making Business Plan in Bengali. জানুন পেন তৈরির ব্যবসা শুরু করার সম্পূর্ণ পদ্ধতি এবং লাভ ও ইনভেস্টমেন্ট।
পেন এমন একটি জিনিস যা প্রতিটি কাজে ব্যবহার করা হয়। শুধুমাত্র যে ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা এগুলি ব্যবহার করেন তা কিন্তু নয়, সমস্ত কাজের হিসাব নিকাশ এবং বলতে গেলে প্রত্যেক ব্যাক্তি এই জিনিসটি ব্যবহার করে থাকেন। তবে যারা একেবারেই লেখাপড়া জানেন না তাদের কথা নাইবা ধরা গেল।
তাছাড়া পেন সবসময়ের জন্য কাজে লাগে। ঘর থেকে স্কুল, স্কুল থেকে দপ্তর এবং সমস্ত জায়গাতে এর ব্যবহার সব সময় একই রকম। বিশেষ করে বলপেনের চাহিদা ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে চলেছে। “ইউজ এন্ড থ্রো” এইভাবে যে পেন গুলি ববহার করা হয় সেগুলি কালি শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আর ব্যবহার করা কোন রকম ভাবেই হয়ে ওঠেনা।
সেগুলিকে বাতিল করতে হয় সুতরাং আবার নতুন পেন ব্যবহার করাটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। আর সেই কারণে এই বলপেনের ব্যবসা অনায়াসেই শুরু করা যায়। কেননা এর চাহিদা প্রচুর। এখন এই পেন এর মাধ্যমে সকলেই তাদের সমস্ত রকমের কাজ, লেখালেখি এবং পড়াশোনা করে থাকেন।
তো চলুন জানা যাক আজকে এই আর্টিকেলের মধ্যে দিয়ে, বলপেন বানানোর ব্যবসা আপনি কিভাবে শুরু করতে পারেন এবং তা থেকে কিভাবে ভালোমতো উপার্জন করতে পারবেন।
পেন বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী:
বলপেন বানানোর জন্য যে সমস্ত র ম্যাটেরিয়ালস এর প্রয়োজন পড়বে সেগুলি হল:-
১) ব্যারেল: এটি এমন একটি জিনিস, বলপেন তৈরি করতে এটিতে কালি ভরা হয়ে থাকে। এগুলি আপনি ১৪০ টাকা প্রতি ২৫০ পিস হিসেবে পেয়ে যাবেন।
২) এডাপ্টার: এডাপ্টার হল ব্যারেল এবং টিপ, এই দুটি অংশের মাঝখানের অংশ। এটি আপনি ৪.৫ টাকা প্রতি ১৪৪ পিস হিসাবে আপনি পেয়ে যাবেন।
৩) টিপ: টিপ হল পেনের এমন একটি জিনিস যেটি থেকে লেখার সময় সমান মাপের কালি বের হয়। এটি আপনি ২৮ টাকা থেকে ৩৫ টাকাতে ১৪৪ পিস পেয়ে যাবেন।
৪) পেনের মুখ অথবা ঢাকনা: এটি পেনের যে অংশ থেকে কালি বের হয় সেই অংশটিকে ঢাকার জন্য ব্যবহার করা হয়। আর এর দাম হল ২৫ টাকা প্রতি ১০০ পিস।
৫) পেনের কালি: একটি পেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যা কিনা ১২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা প্রতি লিটার আপনি পেয়ে যাবেন।
পেন বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কোথায় থেকে কিনবেন:
পেন বানানোর জন্য যে সমস্ত সামগ্রী আপনার প্রয়োজন পড়বে সেগুলো বড় কোনো পাইকারি মার্কেট থেকে কিনতে পারবেন অনায়াসে। তাছাড়া এগুলি অনলাইনের মাধ্যমেও আপনি অর্ডার করতে পারেন ঘরে বসেই।
যার ফলে আপনি ঘরে থেকেই এই জিনিসগুলো পেয়ে যাবেন খুব সহজেই। এগুলি অনলাইনে অর্ডার করার জন্য নিচে যে ওয়েবসাইটগুলো দেওয়া আছে সেখানে গিয়ে অর্ডার করতে পারেন।
১) বলপেন ব্যারেল | Click here |
২) বলপেন এডাপ্টার | Click here |
৩) বলপেনের টিপস | Click here |
৪) বলপেনের মুখ অথবা ঢাকনা | Click here |
৫) পেনের কালি | Click here |
বলপেন বানানোর জন্য মেশিন এর প্রয়োজনীয়তা:
এই ব্যবসাটি শুরু করতে গেলে আপনার হয়তো প্রয়োজন পড়তে পারে ২০০ বর্গ ফিট জায়গার। এই জায়গার মধ্যে প্রায় ৫ টি মেশিন বসাতে পারবেন। যে মেশিন গুলো দিয়ে আপনি ধাপে ধাপে বলপেন বানাতে পারেন। চলুন জানা যাক এই মেশিন গুলি সম্পর্কে:
১) পাঞ্চিং মেশিন: এই মেশিনটি এমন একটি মেশিন যার মাধ্যমে ব্যারেলে এডাপ্টার সেট করা হয়।
২) ইনক ফিলিং মেশিন: এই মেশিনের মাধ্যমে ব্যারেলের মধ্যে পেনের কালি ভরা হয়ে থাকে।
৩) টিপ ফিক্সিং মেশিন: এই মেশিনের সহযোগিতায় এডাপ্টার এ টিপ লাগানোর কাজ করা হয় যেটা লেখার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
৪) সেন্ট্রিফাঙ্গিগ মেশিন: এই মেশিনের সাহায্য নিয়ে পেনের ভিতর সঠিক মাত্রায় কালি ভরা হয় এবং এর ভিতরে অতিরিক্ত হওয়া পেন থেকে বাইরে বের করে দেওয়া হয়।
পেন বানানোর ব্যবসা তে টোটাল ইনভেস্টমেন্ট:
এই ব্যবসাতে পেন বানানোর জন্য আপনার যে মেশিন গুলো প্রয়োজন হবে সেগুলো ত উপরে দেওয়া আছে এবং এই মেশিনের দাম হিসাবে, সব থেকে সস্তা মেশিনের দাম হল ২৫০০০ টাকা এই মেশিন ছোট ব্যবসা শুরু করার জন্য একেবারে ঠিক আছে। এই মেশিনটি কোন বড় হার্ডওয়ারের দোকানে আপনি পেয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া অনলাইন অর্ডার করতেও পারেন।
তাছাড়াও সমস্ত রকমের সামগ্রী নিয়ে বলপেন বানানোর ব্যবসাতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করতে হতে পারে। এই ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ২৫০০০ টাকা শুধুমাত্র মেশিন কিনতে খরচ হয়ে যাবে।
এছাড়াও যদি আপনি বড় ব্যবসা শুরু করেন তাহলে অটোমেটিক মেশিন এর প্রয়োজনীয়তা হবে। সে ক্ষেত্রে সেই মেশিনের দাম চার লাখ টাকা। আর সেই কারণে ইনভেস্টমেন্ট টাও আরো বেশি হয়ে যাবে, বড় ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে।
বল পেন বানানোর প্রক্রিয়া:
যারা এই ব্যবসাটি শুরু করতে চাইবেন তাদের উদ্দেশ্যেই কথাটি বলা যায় যে, এই ব্যবসাটি খুবই সহজ এবং অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়।
১) সবার প্রথমে ব্যারেল কে পাঞ্চিং মেশিন এ লাগাতে হবে। এই মেশিনে আগে থেকেই এডাপ্টার লাগানো থাকে। ব্যারেল, এডাপ্টার এর হিসাব অনুসারে সঠিক জায়গায় লাগিয়ে পাঞ্চ করতে হবে তেমন করার ফলে এডাপ্টার ব্যারেল এ সেট হয়ে যায়।
২) তারপর এডাপ্টার সেট হয়ে যাওয়ার পর ব্যারেল এ কালি ভরতে হবে কালি ভরার জন্য ইনক ফিলিং মেশিন এর ব্যবহার করতে হবে। ইনক ফিলিং মেশিনে আগে থেকেই কালি ভরা থাকে। কালি ভরার সময় এই বিষয়ের উপরে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, ব্যারেল এর সাইজ অনুসারে কালি ভরতে হবে।
বেশি পরিমাণে কালি ভরার ফলে সেটি বাইরে চলে আসতে পারে, সে ক্ষেত্রে পেন এর উপরে কালি মেখে যেতে পারে এবং পেন বিক্রি হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার অসুবিধা হতে পারে। তাই পরিমাপটা সঠিক রাখতে হবে।
৩) এরপর ব্যারেল এর উপরে যে ছিদ্রটি আছে সেখানে হাত লাগিয়ে রেখে দিতে হবে তারপর সেটিকে টিপ ফিক্সিং মেশিনে লাগাতে হবে। এই মেশিনের সাহায্যে কালি ভর্তি করা ব্যরেলে টিপ লাগানো হয়। এরপর এই ব্যারেল টি পেনের আকারে তৈরি হয়ে যায়।
৪) এরপর এই পেনকে সেন্ট্রিফাঙ্গিগ মেশিনে দিতে হবে যার কারনে পেন এর মধ্যে থাকা অতিরিক্ত হাওয়া বাইরে বেরিয়ে যায়।
৫) এবার এই পেন এর ব্যবহার একেবারে অনায়াসে করা যাবে, অর্থাৎ লেখার জন্য একেবারে তৈরি। এইভাবে আপনি মেশিনের সাহায্যে অনেকগুলি পেন বানিয়ে ফেলতে পারবেন অনায়াসে এবং আপনার একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন পেনের, যেটা বাজারে জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে।
পেন বানানোর ব্যবসা তে মারকেটিং:
ইতিমধ্যে বাজারে ছোট-বড় অনেক কোম্পানি পেন তৈরি করে ব্যবসা করছে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার এই ব্যবসাটি বাড়ানোর জন্য ভালোমতো মার্কেটিং করতে হবে। তাছাড়া আপনার তৈরি করা পেন গুলির কোয়ালিটি যেন খুব ভালো হয় এবং লিখতে খুব সুবিধা হয়। তাহলে গ্রাহকদের নিতে কোন অসুবিধা হবে না।
এর সাথে সাথে নিজের এই পেনের ব্র্যান্ড কে প্রমোট করার জন্য ছোট বড় পোস্টার, হোর্ডিং এর ব্যবহার করতে পারেন। শহরে অথবা গ্রামে যে সব জায়গাতে লোক চলাচল বেশি এবং উন্নত কোন জায়গাতে পোস্টার এবং হোডিং লাগাতে পারেন। যার ফলে বেশি পরিমাণে লোক আপনার এই ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানতে পারে।
পেন এর প্যাকেজিং কিভাবে করবেন:
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোন জিনিসের প্যাকেজিং সুন্দর হওয়া জরুরি। তবেই তো মানুষ আকর্ষিত হয়ে সেই জিনিসটি কিনতে পারবেন তাই প্যাকিং করার সময় সুন্দর প্যাকেটের ব্যবহার করুন।
তাছাড়া ব্যবসা টিকে আরো বড় করার জন্য এবং জনপ্রিয়তা দেওয়ার জন্য পাঁচটি পেনের সাথে একটি পেন ফ্রী দিতে পারেন। সাধারণত পেন বিক্রি করার জন্য পাঁচটি অথবা ১০ টি করে প্যাকেট করা হয়। তবে আপনি লুজ হিসাবে একটি করেও বিক্রি করতে পারেন।
পেন বানানোর ব্যবসাতে রেজিস্ট্রেশন:
প্রতিটি ব্যবসার মতো এই ব্যবসাতেও আপনার কিছু রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রাখতে হবে। সবার প্রথমে ব্যবসাটি শুরু করার আগে এই ব্যবসা সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং যখন ব্যবসাটি বেশ ভালো মত চলতে শুরু করবে তখন নিজস্ব একটি ব্র্যান্ডের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিন। আপনি আপনার কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন LLP, OPC অথবা PVT, LTD এর অন্তর্গত রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিতে পারেন।
তাছাড়া আপনার লোকাল অথরিটি থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে রাখাটা জরুরি। কোম্পানির নামে কারেন্ট ব্যাংক অ্যাকউন্ট আর প্যান কার্ড থাকতে হবে। তার সাথে সাথে পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড থেকে লাইসেন্স নিয়ে রাখাটাও জরুরি।
এই ব্যবসা থেকে লাভ:
যদি ছোট আকারের ব্যবসাটি শুরু করেন তাহলে আগেই বলা হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আপনার ইনভেস্ট করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিমসে আপনি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা অনায়াসে উপার্জন করতে পারবেন। আর যদি বড় আকারে ধরা যায় তাহলে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ খরচ হতে পারে, সে ক্ষেত্রে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা কম করে ইনকাম করা সম্ভব।
এই বলপেন এমন একটি জিনিস যার চাহিদা কমে যাওয়া তো দূরের কথা, দিন যাওয়ার সাথে সাথে আরও বেড়ে চলেছে। এখন প্রতিটি ঘরে লেখাপড়া করে এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে এই পেন এর চাহিদাও প্রচুর মাত্রায় বেড়ে চলেছে। আর সেই কারণে এই ব্যবসাটি অধিক লাভজনক একটি ব্যবসা।