Kesar Farming Business Idea in Bengali – কেশর চাষের ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে? কেশর চাষের ব্যবসার কত চাহিদা? কেশর চাষের ব্যবসায় কত টাকা ইনকাম হবে? কি কি জিনিসপত্রের প্রয়োজন হবে? জানুন সবকিছু কেশর চাষের ব্যবসা সম্পর্কে।
বর্তমানে কাজের চাহিদা এতটাই রয়েছে যে অনেকেই চাষ আবাদের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছেন। বলা যেতে পারে উচ্চশিক্ষিত অনেক যুবক যুবতীরাও এই চাষ আবাদের দিকে বেশি মনোনিবেশ করছেন। এখানে পরিশ্রমের পাশাপাশি বেশ ভালো উপার্জন হয় বলেই এবং প্রকৃতির সংস্পর্শে থেকে মন ভাল থাকে তার পাশাপাশি পরিশ্রমের যে দামটা তাঁরা পান তাতে অনেকটাই মন আনন্দে ভরে ওঠে।
তেমনি বিভিন্ন ধরনের চাষের মধ্যে রয়েছে সাফরন (Saffron) অথবা কেশর চাষ। কেশর কোন পাহাড়ি এলাকায় হয়ে থাকলেও এখন সব জায়গাতেই বিশেষ কিছু টেকনিক অবলম্বন করে কেশর চাষ করা হচ্ছে।
কেশর এমন এক খাদ্যদ্রব্য যা খুবই সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করা হলেও এর দাম কিন্তু প্রচুর। সামান্য কয়েক গ্রাম কেশরের দাম প্রায় আকাশ ছোঁয়া, আর এর চাহিদাও প্রচুর। বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করার সাথে সাথে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি বিশেষ উপযোগী, বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাও হয়ে থাকে এর মধ্যে দিয়ে তাই এর চাহিদা কখনোই কমবে না।
আর যদি আপনি এই কেশর আপনার কাছে পড়ে থাকা কোন জমিতে চাষ করে থাকেন তাহলে তো আর কথাই নেই। প্যাকেটজাত করে দোকানে দোকানে বিক্রি করতে পারবেন এবং তা থেকে বেশ ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। কয়েক হাজার থেকে শুরু করে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা যেতে পারে। প্রতি মাসে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা কেশর চাষ করে এবং বিক্রি করে ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ পর্যন্ত উপার্জন করছেন।
কেশর এতটাই দামি হয়ে থাকে যে অনেকেই এটাকে “লাল সোনা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ভারতে এই সময় কেশরের দাম প্রায় ২,৫০,০০০ থেকে ৩ লাখ টাকা (প্রতি কিলোগ্রাম) এর কাছাকাছি। এছাড়াও যেহেতু খুবই কম পরিমাণে ব্যবহার করা হয় তাই কয়েকটা কেশরের পাপড়ি প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার কাছাকাছি দাম হয়ে থাকে। কেশরের চাষ করে সেটি বাজারে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করেও বেশ ভালো উপার্জন করতে পারবেন।
কেশর চাষ করার জন্য কিভাবে জমি তৈরি করবেন?
যেহেতু আমরা আগেই জেনেছি যে পাহাড়ি এলাকায় এই কেশর চাষ হয়ে থাকে, তবে এখন সব জায়গাতেই শুধুমাত্র মাটি তৈরি করার উপর নির্ভর করে কেশরের চাষ করা যেতে পারে। কেশরের বীজ রোপন করার আগে ভালো করে জমি চষতে হবে, এছাড়াও মাটিকে ঝরঝরে করে নিতে হবে তার সাথে সাথে গাছের সারের জন্য ২০ টন গোবর সার, তার সাথে ৯০ কিলোগ্রাম নাইট্রোজেন, ৬০ কিলোগ্রাম ফসফরাস আর পটাস প্রতি হেক্টর অনুসারে জমিতে ছড়াতে হবে। এর ফলে কেশরের গাছগুলি বেশ তরতাজা হয়ে উঠবে।
যেহেতু উঁচু কোন পাহাড়ি এলাকায় এর চাষ খুবই ভালো হয় তাই জুলাই মাসে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই চারা রোপন করার উপযুক্ত সময় (পাহাড়ি এলাকার জন্য)। তারপর জুলাই মাসের মাঝখানে এই কেশরের চারা রোপন করার সঠিক সময় হিসেবে ধরা হয়। আর যদি সমতল ভূমিতে কেশর চাষ করতে চান তাহলে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মাঝখানে কেশরের বীজ রোপন করতে হবে।
কেমন মাটিতে কেশরের চাষ ভালো হয়?
কেশর চাষ (Saffron farming) করার জন্য অবশ্যই চিকন এবং ঝরঝরে তবুও হালকা ভিজে মাটিতে এটি বেশ ভালো হয়। কিন্তু কেশরের চাষ অন্যান্য মাটিতেও খুব সহজেই করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, যে জমিতে কেশর চাষ করা হয়েছে সেখানে যেন কোনোভাবেই জল জমে না থাকে তাহলে কিন্তু সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
কেননা কেশর গাছ খুবই ছোট ছোট হয় এবং প্রতিটি গাছে একদম ছোট থাকাকালীন ফুল আসে আর সেই ফুলের মাঝখানে থাকা লাল লাল লম্বা লম্বা পাপড়ি গুলোই কেশর। এমন জমি নির্বাচন করুন যেখানে কোনভাবেই জল জমে না এবং হালকা ভিজে থাকলেও সব সময় মাটি ঝরঝরে থাকে। তাহলে ফসল নষ্ট হওয়ার কোন ভয় থাকে না এবং ভালো মানের কেশর উৎপাদন করতে পারবেন।
গরমকালে কেশরের চাষ করতে পারেন:
কেশরের চাষ সমুদ্র তট থেকে ১৫০০ থেকে ২৫০০মিটার উঁচু জায়গাতে খুব ভালো হয়। তবে কেশর চাষের জন্য ঠিকঠাক ভাবে রোদ পাওয়া যাবে এটা কিন্তু খুবই জরুরি বিষয় অর্থাৎ গাছের জন্য পর্যাপ্ত রোদের প্রয়োজন, ঠান্ডা এবং বর্ষা ঋতুতে কেশরের চাষ কিন্তু করা যায় না, যখন গরম কাল তখন কেশর চাষের উপযুক্ত সময়।
কেশরের ব্যবহার:
বিভিন্ন খাবার তৈরি করতে, রূপচর্চা থেকে শুরু করে অনেক ধরনের রোগের ওষুধ হিসেবেও কেশরকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। কেশরের ব্যবহার ক্ষীর তৈরি করতে, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরিতে, দুধের সাথেও পান করা হয়ে থাকে। এর ফলে অনেক রোগ সেরে যায় বলে এর চাহিদা প্রচুর।
কোন খাবারে কেশর যুক্ত করলে সেই খাবারের স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি করতেও কেশরের ব্যবহার করা হয়। পেটের বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসা করতেও কেশর বিশেষভাবে উপযোগী। তবে এই কেশরের ব্যবহার খুবই সামান্য পরিমাণে করা হয় কেননা অধিক মাত্রার ব্যবহার করলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
কেশর চাষ করে কিভাবে উপার্জন করবেন?
কেশর যখন পরিপক্ক হয়ে যাবে তখন সেগুলি তুলে এনে প্যাকেটজাত করে আপনার কাছাকাছি থাকা কোন বাজারে বা দোকানে ভালো দাম দিয়ে বিক্রি করতে পারেন, এছাড়াও আপনি অনলাইনেও বিক্রি করতে পারেন।
কেশর চাষ করে এর ব্যবসাতে যদি প্রতিমাসে কমপক্ষে ২ কিলো কেশর বিক্রি করতে পারেন তাহলে প্রায় ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন। আর যদি সব মিলিয়ে ১ কিলো পর্যন্ত যদি বিক্রি করতে পারেন সে ক্ষেত্রেও ৩ লাখ টাকা উপার্জন করতে পারবেন। বিশেষ কোনো দেখভালের প্রয়োজন নেই, তবে অনেকটা জায়গা জুড়ে যদি চাষ করা যায় তাহলে প্রতি মাসে বেশ মোটা অংকের টাকা হাতে পেতে পারেন।
বর্তমানে ছাদ বাগানে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে থাকেন অনেকেই তার মধ্যে শখের বসে বড় টবে কেশরের চাষ করে থাকেন শুধুমাত্র বাড়ির প্রয়োজন মেটাতে। তাহলে আপনিও কিন্তু আপনার কাছে পড়ে থাকা কোন জমিতে যেখানে জল নিকাশের ব্যবস্থা খুবই ভালো থাকবে, মাটি খুবই ভালো সেখানে অনায়াসেই কেশরের চাষ করে এই ব্যবসাটি খুব কম সময়ের মধ্যে বড় আকারে নিয়ে যেতে পারেন।
ভালো মানের কেশরের বীজ অবশ্যই রাখতে হবে আপনার ব্যবসার মধ্যে। গরমকালে এটি চাষ করে বেশ ভালো উপার্জন করার পর ঠান্ডা এবং বর্ষাকালকে এড়িয়ে যেতে হবে।
খুবই কম সময়ের মধ্যে বেশি টাকা উপার্জন করতে কেশরের চাষ আর সেটি প্যাকেটজাত করে বিক্রি করার এই ব্যবসাটি আপনার পছন্দ হতে পারে। আর যদি আপনার চেনাশোনা কেউ কোন ব্যবসা করতে চান তাহলে তাঁকেও এই ব্যবসার আইডিয়াটি জানাতে পারেন।