মহিলা ও গৃহবধূদের জন্য দুর্দান্ত ৭টি সাইড বিজনেস আইডিয়া, এই ব্যাবসা করে বাড়িতে বসে রোজগার করুন। Best 7 Side Business Ideas for Women & House Wife in Bengali
Best Side Business Ideas for Women & House Wife: আমাদের দেশে মহিলাদের ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, সে ক্ষেত্রে নিজের একটি পরিচয় বাড়ানোর কোন সময় হয়ে ওঠে না তাদের পক্ষে, বিশেষ করে যারা গৃহবধূ, ঘরের কাজ, ছেলে মেয়েদের স্কুল, সামলে নিজের জন্য সময় টুকু বের করার মত সময় হয়ে ওঠে না।
তবে চাইলে এর ফাঁকেও আপনি সময় বের করে নিজের জন্য কিছু করতে পারেন। শুধু আপনার চিন্তাধারা টা একটু বদলাতে হবে, সব কাজের ফাঁকে আপনার পছন্দের কোন কাজ করে যেমন আপনি একটা আনন্দ অনুভব করবেন তার সাথে সাথে কিছু টাকাও রোজগার করতে পারবেন আপনার নিজের জন্য এবং পরিবারের জন্য।
নারীদের জন্য সাইড বিজনেস আইডিয়া সম্পর্কে জানা যাক: (Side Business Ideas for Women)
১) বিউটি পার্লার: Beauty parlor Business
দিন দিন মেকআপ এবং বিউটি পার্লারের চাহিদা একেবারে তুঙ্গে, নারীরা মেকআপ করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পছন্দ করেন। কোন অনুষ্ঠান অথবা পার্টিতে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে বিউটি পার্লারের তুলনা মেলা ভার।
সে ক্ষেত্রে বিউটিশিয়ানের কোর্স করে বিউটি পার্লার খুলতে পারেন আপনি। সে ক্ষেত্রে আপনি ঘর থেকেই শুরু করতে পারেন। ঘর থেকে শুরু করার উপকারিতা হলো, ঘরের মধ্যে যদি কোন কাজ পড়ে যায় সেক্ষেত্রে বিউটিশিয়ানের কাজ করতে করতে সে কাজটাও কিন্তু আপনি মিটিয়ে ফেলতে পারবেন।
তার উপরে প্রথমত আপনাকে দোকান ভাড়া মেইন্টেন করতে হবে না, যদি নিজের ঘরে থেকে বিউটিশিয়ান অথবা বিউটি পার্লারের কাজ শুরু করেন। বিউটি পার্লারের এই ব্যবসাটি করতে গেলে আপনাকে কিছুটা হলেও অল্প পরিমাণে ইনভেস্ট করতে হবে কিন্তু এরপরে আপনার লাভের অংশটা বেশি আসবে।
২) টেলারিং: Tailoring Business
অনেক নারীদের মধ্যে দেখা যায় কাপড় সেলাই এবং কাপড় দিয়ে বিভিন্ন রকমের ড্রেস তৈরি করতে ভীষণ পছন্দ করার প্রবণতা থাকে, সেটাকেও কিন্তু আপনার পছন্দের মধ্যে রাখবেন না, সেটা একটা ব্যবসার জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন।
প্রথমে ছোট থেকেই শুরু করুন না, তারপর সেটা আস্তে আস্তে বড় জায়গায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করুন। ঘরের কাজ সামলে উঠে তার পাশাপাশি টেলারিংয়ের কাজটাও করে ফেলতে পারেন আপনি।
আজকাল নিত্যনতুন পোশাক বানানোর ধুম পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনার টেলারিং এর ব্যবসা চলবে পুরোদমে। এক্ষেত্রে ইনভেস্ট অথবা আপনার প্রথম খরচটা কিন্তু অনেকটাই কম পড়বে, শুধুমাত্র প্রথমে আপনার সেলাই মেশিন, সুতা এবং কিছু অল্প পরিমাণ কাপড় কিনে আপনাকে এই ব্যবসা শুরু করতে হবে।
তারপর আস্তে আস্তে বড় পর্যায়ে চলে গেলে আপনি ইচ্ছামত ব্যবসাটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে পারেন। দেখা যাচ্ছে আপনার এই ছোটো ব্যবসাটি একদিন টেলারিং ব্যবসা (Tailoring Business) বড় আকার ধারণ করেছে। আর যে টাকাটা আপনি ইনভেস্ট করেছেন সেটার কয়েকগুণ হয়ে আপনার কাছে ফিরে আসছে।
৩) টিউশন অথবা প্রজেক্ট মেকার: Tuition or project maker Business
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সংসারের সব কাজ সামলে সন্ধার সময় গৃহবধূরা অনেকসময় ফাঁকাই থাকেন। কেউবা টিভি দেখতে অথবা অনেক সময় বিনোদন জগতে সময় টা পার করে দেন।
অতিরিক্ত কিছু রোজগারের জন্য এই সময় টাকেও কিন্তু কাজে লাগাতে পারেন। ছোট ছোট কিছু বাচ্চাদের নিয়ে টিউশন পড়াতে পারেন। এখন বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য টিউশন খুঁজে পাওয়া অনেক কষ্টকর ব্যাপার।
সে ক্ষেত্রে আপনি যদি এই কাজটা করে থাকেন আপনার আশেপাশের বাচ্চারা অনেকটাই স্বস্তি পাবে এবং আপনার একটা আলাদা আয় এর রাস্তা তৈরি হবে। এর সাথে সাথে বাচ্চাদের প্রজেক্ট এর কাজও করতে পারেন আপনি, তার বিনিময় আপনি টাকাও রোজগার করতে পারেন।
বাচ্চাদের স্কুলে পড়ার সাথে সাথে প্রতিনিয়ত প্রজেক্ট দেওয়া হয় যেগুলো অনেক সময় তারা নিজেরা করে উঠতে পারে না।
সেক্ষেত্রে টিউশন অথবা বাড়ির অভিভাবকদের সেই প্রজেক্ট করে দিতে হয়, অনেক অভিভাবক দের এমন সময় হয়ে ওঠে না, সেক্ষেত্রে টিউশনির পাশাপাশি আপনি প্রজেক্ট মেকারের কাজটাও করে ফেলতে পারেন।
এতে বাচ্চাদের আরো অনেক সুবিধা হবে, এবং আপনারও ভালো লাগবে তাদের এই কাজগুলো করতে, তার সাথে সাথে রোজগার তো আছেই।
৪) এন্টিক আইটেম অথবা হবি ক্লাস (আপনার পছন্দের): Antique items or hobby classes Business
কিছু কিছু মহিলাদের মধ্যে হাতের কাজ এবং ইউনিক কিছু জিনিস তৈরির প্রবণতা দেখা যায়, এবং তারা সেই জিনিসগুলো খুব সুন্দরভাবে তৈরি করতে পারেন, সেটাকে অনেক সময় ঘর সাজানোর কাজে হোক অথবা কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য, সে সময় পার করা এবং শখের বশে করে থাকতে পারেন, তবে এই জিনিসটাকে আপনি ব্যবসায়িক দিকে নিয়ে যেতে পারেন।
এই জিনিসগুলো বানিয়ে আপনি বিক্রি করা শুরু করতে পারেন। এর ফলে আপনি প্রচুর টাকা রোজগার করতে পারবেন। এই কাজ আপনার পছন্দমত, তাই এই কাজ করতে আপনার কোন কষ্ট হবে না, বরং উল্টে আনন্দ পাবেন এই কাজের জন্য। আর তার সাথে সাথে রোজগারের মাত্রা বাড়তে থাকবে দিনদিন।
এছাড়াও যদি আপনার কোন বিষয়ে খুব আগ্রহ থেকে থাকে, সে বিষয়ে কিন্তু আপনি অনলাইনে ক্লাস করতে পারেন, অথবা বাড়িতেও ক্লাস করতে পারেন, এর ফলে মানুষের মধ্যে ক্রিয়েটিভ মানসিকতা তৈরি হবে, আর এর বদলে অথবা ক্লাসের বদলে আপনি অনেক টাকাও রোজগার করতে পারবেন।
৫) নার্সারি ব্যবসা: Nursery business
অনেক মহিলাদের দেখা যায় তারা গাছপালা ভীষণ পছন্দ করেন, তবে গাছপালা পছন্দ করে না এমন মানুষ মেলা ভার, তবে গাছপালার যত্ন নেওয়াটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে ক্ষেত্রে অনেকেই বাড়িতে একটু ফাকা জায়গা থাকলে সেখানে বিভিন্ন রকমের ফুল গাছ, ফল গাছে, ভরিয়ে ফেলেন।
সেক্ষেত্রে আপনার বাগানটাকে নার্সারি করে ফেলতে পারেন। সেখানে কলমের মাধ্যমে নতুন চারা তৈরি এবং মৌসুমি ফুলের বাহার দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারেন। কারন আপনার আশেপাশের বাড়ি থেকে আপনার বাড়িতে এই নার্সারি থেকে গাছ পালার অর্ডার নিয়ে আপনি পেরে উঠবেন না।
তাই সে ক্ষেত্রে ঘরের কাজ করার পাশাপাশি আপনার বাড়িতে কিছু ফাঁকা জায়গা থাকলে সেখানে নার্সারি করতে পারেন। আজকাল ঘরেতে সবাই সবার পছন্দ মত ফুল গাছ ও জায়গা থাকলে ফল গাছের শখ করে থাকেন।
সেক্ষেত্রে এই চাহিদাটা কিন্তু আপনি পূরণ করতে পারেন। আপনার আনন্দ হওয়ার সাথে সাথে কিছু টাকাওতো রোজগার করতে পারবেন, তাই না।
৬) মোমবাতি তৈরি: Candle Making Business
মোমবাতি প্রতিটি ধর্ম স্থানে লেগে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি পাইকারি দামে মোম কিনে ডাইস এর মাধ্যমে মোমবাতি তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি অনলাইনে অনেক প্রসেস দেখতে পাবেন।
সেখান থেকেও আপনি প্রশিক্ষণ নিতে পারেন, এতে আপনার অবসর সময়ে অল্প কিছু সময় ও টাকা ইনভেস্ট করে মোমবাতি তৈরির ব্যবসা করতে পারেন।
আর এর বাজার দর অনেকটাই উচ্চ, সেক্ষেত্রে আপনার রোজগারটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তাছাড়া ডিজাইনার মোমবাতির চাহিদা এবং দাম একেবারে অভাবনীয়।
৭) সাবান তৈরি: Shop Making Business
আজকাল হাতে তৈরি সাবানের চাহিদা এতটাই যে অনেকে ঘর থেকে এই কাজ শুরু করে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ফেলেছে তাদের এই ব্যাবসায়িক দিক।
আপনিও কিন্তু চাইলে একটু প্রশিক্ষণ নিয়ে অল্প কিছু টাকা ইনভেস্ট করে হ্যান্ড মেড সোপ (Hand Made Shop) তৈরির ব্যবসা করতে পারেন অর্থাৎ হাতে তৈরি সাবান এর ব্যবসা করতে পারেন।
এর কিন্তু চাহিদা প্রচুর। তাই দিন দিন আপনার সাবানের গুণগতমান যদি সকলের পছন্দ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনার রোজগারের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলবে।
গৃহবধূদের যারা খুব একটা অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করতে সক্ষম নন, তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু একেবারেই মন খারাপের কোন কারণ নেই, আপনার অবসর সময়টাকে অযথা নষ্ট করবেন না। আপনার পছন্দমত যেকোনো কাজ আপনি করতে পারেন, তার মাধ্যমে আপনার আনন্দ এবং রোজগার দুটোই বজায় থাকবে।
তার সাথে সাথে নিজের একটা পরিচয়ও তৈরি করতে পারবেন আপনি। আর সেটা একটা গৃহবধূর পক্ষে অনেকটাই আনন্দের, কারণ নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আনন্দটাই আলাদা, তাই না।